পুরোনো ব্যাধিতে দিল্লি রীতিমতো জেরবার। হাল এতটাই খারাপ যে কবে রাজধানী সুস্থ হবে, কেউ তা বলতে পারছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ কিছু জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার। গোটা রাজধানীতে জারি করা হয়েছে ‘জরুরি অবস্থা’।
ব্যাধি হলো বায়ুদূষণ, দিন দিন যার মাত্রা বেড়েই চলেছে। চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি অবস্থা এতটাই অসহনীয় হয়ে উঠেছে যে আগামী দুই দিন রাজধানীর সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবস্থা সামাল দিতে চলতি মাসের শুরু থেকে রাজধানীতে আরও একবারের জন্য চালু করা হয় ‘অড-ইভন’ বা ‘জোড়-বিজোড়’ গাড়ি চলাচল। এ ব্যবস্থায় ছুটির দিন বাদ দিয়ে অন্য সব দিনে বেসরকারি গাড়ি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। গাড়ির নম্বরপ্লেটের শেষের সংখ্যা জোড় হলে তা যেদিন চলবে, সেদিন বিজোড় সংখ্যার গাড়ি চলবে না। আবার বিজোড় সংখ্যার গাড়ি যেদিন রাস্তায় নামবে, সেদিন অচল থাকবে জোড় সংখ্যার গাড়ি। দিল্লি সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তাতে সাময়িকভাবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার কেজরিওয়াল বলেছেন, অবস্থার উন্নতি না হলে ‘জোড়-বিজোড়’ব্যবস্থা আরও কিছুদিন চালু রাখা হবে। মাসের শুরুতে চালু হওয়া এ ব্যবস্থা আজ শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা।
শুধু স্কুল-কলেজ বন্ধই নয়, রাজধানী দিল্লি ও তার আশপাশের সব অঞ্চলে যাবতীয় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজের জন্য বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ধূলিকণা, ইংরেজিতে যাকে ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ বলা হয়, তা ফুসফুসে জমা হয়ে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। মানুষজনকে, বিশেষ করে শিশুদের এর জন্য বেশি ভুগতে হয়। দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের ফরিদাবাদ, গুরুগ্রাম, সোনেপত, বাহাদুরগড়, বাগপত, ভিওয়াদি, নয়ডা, গ্রেটার নয়ডার যেসব কয়লাভিত্তিক শিল্প এখনো গ্যাসভিত্তিক হয়ে ওঠেনি, তাদের কারখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। গ্রিন ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, ১৫ নভেম্বরের পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে।
প্রতিবছর দীপাবলির পর দিল্লির বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার নেয়। দীপাবলির বাজির ধোঁয়ার সঙ্গে মেশে হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশে কাটা ফসলের গোড়া পুড়িয়ে দেওয়ার ধোঁয়া। এ সময় উত্তর ভারতের বাতাসও ভারী থাকে। ফলে তীব্র ধোঁয়াশা সাদা আস্তরণ হয়ে ঝুলে থাকে রাজধানীর আকাশে। এই ধোঁয়াশার সঙ্গে মেশে নির্মাণকাজের ধূলিকণা ও যানবাহন থেকে নির্গত জ্বালানিদূষণ। রাজধানী ও তার আশপাশে যেসব তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে ওঠে সেগুলোও। সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক অসহনীয় অবস্থার, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও যা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কাটা ফসলের গোড়া খেত থেকে না তুলে মাঠেই পুড়িয়ে দেওয়া উত্তর ভারতে বহু বছর ধরেই চালু রীতি। এতে চাষির খরচ কমে। কিন্তু এই রীতি পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। কয়েক বছর ধরে এর বিরুদ্ধে প্রচার চালানোয় কিছুটা উপকার পাওয়া গেলেও প্রধানত অর্থনৈতিক কারণে কৃষকদের বিরত করা সম্ভব হয়নি। এ বছর সুপ্রিম কোর্ট হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাব সরকারকে অর্থসাহায্যের নির্দেশ দেওয়ায় মনে করা হচ্ছিল, কিছুটা কাজ হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার আগেই কাটা ফসলের গোড়া পোড়ানো শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি তাতে আরও খারাপ হয়েছে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এক দিন বৃষ্টি হওয়ায় দিন দুয়েকের মতো দূষণের প্রকোপ কম ছিল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে রাজধানীর আকাশ ফের ঘোলাটে হয়ে রয়েছে। সূর্য প্রায় অদৃশ্য। বাতাসও ভারী। শ্বাসকষ্ট প্রবল। পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন মহলে নানা রকম ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে, যেগুলোর একটা হলো কৃত্রিম বৃষ্টি।