প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) আজ মঙ্গলবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে আবার হাজির করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পি কে হালদারের সঙ্গে আরও পাঁচজনকেও আজ হাজির করা হয়। এ সময় তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ড চায় ইডি।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে পি কে হালদারকে গত শনিবার দুপুরের দিকে গ্রেপ্তার করে ইডি। এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদারের প্রাসাদোপম বাড়িসহ অনেক সম্পদের সন্ধান পায় ইডি।
আজ পি কে হালদারের পাশাপাশি আর যে পাঁচজনকে আদালতে হাজির করা হয়, তাঁদের একজন প্রাণেশকুমার হালদার। তিনি উত্তর ২৪ পরগনায় পি কে হালদারের জমিজমা, বাড়ি এবং মাছের ঘের ব্যবসা আংশিকভাবে দেখাশোনা করতেন। অন্য চারজন হলেন মৈত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদারকে।
ইডির পক্ষের আইনজীবী আদালতের কাছে ১০ দিনের (২৭ মে পর্যন্ত) রিমান্ড দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। স্বপন মৈত্রর আইনজীবী শনিবার অর্থাৎ ২১ মে পর্যন্ত রিমান্ড দেওয়ার আবেদন করেন। অর্থাৎ কোনো পক্ষই রিমান্ডের বিরোধিতা করেনি। শুধু সরকারপক্ষের আইনজীবী ১০ দিন চেয়েছেন এবং হালদারের সহযোগীদের আইনজীবী চার দিন।
শুধু আমানা সুলতানার ক্ষেত্রে ইডি নয়, বিচার বিভাগীয় হেফাজতের আবেদন করেন ইডির আইনজীবী। তবে তাঁকে বিচার বিভাগীয় জেরা করার অনুমতির আবেদন করেন সরকারপক্ষের আইনজীবী।
এই আবেদন বিচারপতি মাসুক হোসেন খান মেনে নিয়েছেন কি না, তা বোঝা যাবে এ বিষয়ে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত বা আদেশ জানানোর পরে।
এ ছাড়া ইডির আইনজীবী জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পর পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। এর জন্য আদালত যদি চিকিৎসককে ইডির হেফাজতে পাঠিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দেন, তবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সমস্যা থাকে না। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রচারমাধ্যমের সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে, একটা সমস্যার ব্যাপার বলে সরকারপক্ষের আইনজীবী মন্তব্য করেন।
স্বপন মৈত্র ওরফে মিস্ত্রির আইনজীবী তাঁর মক্কেলের শারীরিক অসুস্থতা আছে বলে তাঁকে কিছু ওষুধ দেওয়ার জন্য বিচারপতিকে অনুরোধ করেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদার বাংলাদেশে আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের একজন। ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান, পরে কানাডায় পাড়ি জমান।
ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ ও বসবাস, বেনামে সম্পত্তি কেনা এবং আইনবহির্ভূতভাবে অর্থ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা—এসব অভিযোগে পি কে হালদার ও তাঁর পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা অর্থ পাচার আইনের ওপর। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের ব্যবসা দেখাশোনা করা তাঁর ভাই প্রাণেশ কুমার হালদার আছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইডি বলছে, পি কে হালদার নিজেকে শিবশংকর হালদার পরিচয় দিয়ে ভারতের একাধিক সরকারি পরিচয়পত্র, যেমন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, আয়কর দপ্তরের পরিচয়পত্র পিএএন বা প্যান, নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র, আধার কার্ড ইত্যাদি জোগাড় করেছিলেন। পি কে হালদারের সহযোগীরাও একই কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে ইডি।