ভারতের পাঁচ রাজ্যের ফলাফল ঘোষণার মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে, পাঞ্জাব রাজ্যে প্রথমবারের মতো আম আদমি পার্টি (আপ) সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করছে। রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে এ নির্বাচনে। এর আগে সাত দশক ধরে দুই দল কংগ্রেস ও শিরোমনি আকালি দল পাল্টাপাল্টি ক্ষমতায় এসেছে। পাঞ্জাব বিধানসভার আসনসংখ্যা ১১৭। এর মধ্যে ৯০টি আসনে এগিয়ে আছে আম আদমি। কংগ্রেস মাত্র ১৮ আসনে এগিয়ে। ফলাফল এমন থাকলে দলটি আগের বছরের তুলনায় ৫৯টি আসন কম পাবে। ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আম আদমির পাঞ্জাব বিজয়ে পাঁচ কারণ তুলে ধরেছে। সেগুলো হলো—
পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা
পাঞ্জাবে কংগ্রেস ও শিরোমনি আকালি দলই বিগত সময়ে ক্ষমতায় থেকেছে। এর মধ্যে বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শিরোমনি ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকেছে। মানুষ আকালি ও কংগ্রেসকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মনে করেছে। আর এই দুই দলের বাইরে এসে মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে। পুরো পাঞ্জাব, বিশেষ করে মালব এলাকার মানুষ এবার আম আদমির পক্ষে তাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়েছে। ভোটাররা ২০ বছর ধরে দুই দলকে দেখে ফেলেছেন। কিন্তু দুটো দল কাঙ্ক্ষিত কিছু দিতে পারেনি। তাই তারা নতুন কোনো দলকে সুযোগ দিতে চেয়েছে। আম আদমির এবারের স্লোগান ছিল, ‘আর ধোকা খাবো না ভগবত মান আর কেজরিওয়ালকে সুযোগ দেব।’ মানুষ সেই সুযোগই দিয়েছেন এবারের নির্বাচনে।
দিল্লি মডেল
আম আদমির কর্ণধার অরবিন্দ কেজরিওয়াল রাজধানী দিল্লি বিজয় করে এবং সেখানে সরকার পরিচালনা করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা, সস্তায় স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংস্থান করেছেন তিনি। কেজরিওয়াল সেই রাজ্যেই এটি সম্ভব করেছেন, যেখানে বিদ্যুতের দাম ছিল সবচেয়ে বেশি আর স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় পুরোটাই বেসরকারি খাতের হাতে বন্দী ছিল। কেজরিওয়াল একটি মডেল স্থাপন করেছেন, যার বার্তা পাঞ্জাবে পৌঁছেছে।
নবীন ভোটার ও নারী
নবীন ভোটার ও নারীরা এবার একটি নতুন দল আম আদমিকে ঢেলে ভোট দিয়েছে। এই দুই ভোটার শ্রেণির নিরঙ্কুশ সমর্থন গেছে আম আদমির প্রতি। দুর্নীতির মূলোৎপাটন নতুন ভোটারদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আম আদমি নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, প্রতি মাসে নারীদের নামে এক হাজার ভারতীয় রুপি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা হবে। অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি নির্বাচনের আগে দেওয়া হয় তা ভঙ্গ করার জন্য। কিন্তু নারীরা এতে বিশ্বাস করেছেন। সুনির্দিষ্টভাবে নারীদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেই এবার আম আদমির নির্বাচনী প্রচার হয়েছে। আর তাতে কাজ হয়েছে। চরমভাবে পুরুষতান্ত্রিক এ রাজ্যে নারীদের এভাবে ক্ষমতায়িত করার প্রচেষ্টায় আপাতদৃষ্টে কাজ হয়েছে।
ভগবত মানকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সামনে আনা
পাঞ্জাবের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা ভগবত মান সিংকে এবারের নির্বাচনী প্রচারে দলীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরে আম আদমি। পাঞ্জাবের অনেক মানুষের মধ্যে তাঁর প্রবল জনপ্রিয়তা। প্রথাগত রাজনীতিকদের মতো তিনি নন। আর তাঁর মধ্যে রাজনীতিকদের সেই কেতাদুরস্ত ভাবও নেই। ভগবতকে মানুষ আগে কোনো রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে দেখেনি। তাই এই নতুন ও কালিমাহিন মুখটিকে মানুষ তাঁদের রাজ্যের কর্ণধার হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। এভাবে একটি লোককে সামনে রাখার কারণে বিরোধীরাও কোনো অনিশ্চয়তার প্রসঙ্গ তুলতে পারেনি।
কৃষক আন্দোলন ও মালব
ভারতে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা কৃষক আন্দোলন এবং তারপর তাঁদের দাবির প্রতি সরকারের নতিস্বীকার এবারের নির্বাচনে আম আদমির বিজয়ে ভূমিকা রেখেছে। এই আন্দোলনের সময় সামনের সারিতে ছিলেন কৃষকনেতা যোগিন্দর সিং উগ্রাহান। তিনি কৃষক দল বিকেইউর আঞ্চলিক প্রধান। মালব অঞ্চলে তাঁর প্রভাব যথেষ্ট। আর এ অঞ্চলে আছে রাজ্য বিধানসভার ৬৯ আসন। সেই আসনগুলো যে আম আদমির ঘরেই যাবে, তা ভোট-পরবর্তী এক্সিট পোলে বলা হয়েছে।