জঙ্গি হামলা প্রসঙ্গে ভারতীয়রা

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধই একমাত্র সমাধান, চান সার্জিক্যাল স্ট্রাইকও

জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল। ছবি: রয়টার্স
জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল। ছবি: রয়টার্স

কাশ্মীরে পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার প্রতিকার হিসেবে ভারতের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, এ জন্য যৌথভাবে এক জরিপ চালিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে-এক্সিস মাই ইন্ডিয়া। জরিপে অংশ নিয়ে বেশির ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন, কঠোরভাবে সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধই একমাত্র সমাধান। আবার অনেকে যুদ্ধের বদলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের পক্ষেই। কেউ কেউ তো আবার অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের ভাগ্য যেভাবে নির্ধারণ হয়েছিল, ঠিক তেমনটাই চান জয়শ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের বেলায়। আবার কেউ কেউ চান পাকিস্তানকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। এরপরই দেশটির ২৯টি রাজ্যে জরিপ চালায় এক্সিস মাই ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়া টুডের পলিটিক্যাল স্টোক এক্সচেঞ্জ (পিএসই)। সেই জরিপে এসব চাওয়া অংশগ্রহণকারীদের।
২০-২২ ফেব্রুয়ারিতে চালানো জরিপে অংশ নেন ১২ হাজার ৮১৫ জন।

জঙ্গি হামলার পরই ভারতের করণীয় হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধকেই সমাধানের একমাত্র পথ মনে করেন জরিপে অংশ নেওয়া শতকরা ৩৬ ভাগ উত্তরদাতা। তাঁদের চাওয়া হচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হোক। ২৩ শতাংশ উত্তরদাতা যুদ্ধের পরিবর্তে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চান। অর্থাৎ সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা বেশি। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে তালেবান নেতা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিল যেভাবে হত্যা করেছিল, ঠিক সেভাবে মাসুদ আজহারকেও হত্যা করা হোক। এই পন্থায় আস্থা ১৮ শতাংশের। আর পাকিস্তানকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার পক্ষে ১৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

৪৯ শতাংশের বিশ্বাস সন্ত্রাসবাদের লড়াই যোগ্যতম নেতা মোদি
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতম নেতা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জরিপে অংশ নিয়ে শতকরা ৪৯ জনই এটা বিশ্বাস করেন। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। জরিপের মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন সন্ত্রাসবাদ দমনে রাহুল গান্ধী যোগ্য নেতা। অন্যদিকে ৩ শতাংশ মানুষ সন্ত্রাসবাদ দমনে যোগ্য নেতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে মনে করেন। এ ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, উত্তর প্রদেশের বিএসপির নেত্রী মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব-রা প্রত্যেকেই মাত্র ১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

পাকিস্তান ও কাশ্মীর নীতির ক্ষেত্রে ইউপিএ সরকারের চেয়ে বর্তমান মোদি সরকারই এগিয়ে। ৪৭ শতাংশ মানুষ এটা মনে করেন। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের প্রতি আস্থা ২২ শতাংশের। অটল বিহারি বাজপেয়ি সরকারের চেয়েও মোদি সরকার অনেক ভালো বলে মনে করেন ১২ শতাংশ মানুষ।

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরই পাকিস্তানকে কার্যত একঘরে করার প্রক্রিয়া শুরু করে ভারত। পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট ফেভারেড নেশন’ (এমএফএন) বা সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের তকমাও প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত। এরপর পাকিস্তান থেকে সব পণ্যের ওপরই আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানকে নদীর পানি সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।

হামলার পেছনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও আইএসআই-প্রধান জড়িত
পুলওয়ামা জঙ্গি হামলায় ৪০ ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও দেশটির পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান দায়ী বলে মনে করেন ৩০ শতাংশ মানুষ। আর ১৯ শতাংশের মত হলো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ জন্য দায়ী। ১৩ শতাংশ দায়ী করেন হামলার মূল চক্রী জয়শ-ই-মুহাম্মদকে। অন্যদিকে ২৫ শতাংশের অভিমত, হামলার দায় জয়শ-ই-মুহাম্মদ, আইএসআই, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও ইমরান খান।

গোয়েন্দারা ব্যর্থ
জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা প্রশ্ন তুলেছেন, এত বড় হামলা কীভাবে সংঘটিত হলো। এর উত্তরে ১৩ শতাংশের অভিমত, গোয়েন্দা ব্যর্থতাই দায়ী। ১৭ শতাংশের অভিমত, সন্ত্রাস দমনে কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বল নীতির কারণেই এই হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে এ হামলা বলে মনে করেন ৭ শতাংশ উত্তরদাতা।