ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ফলাফল ঘোষণা হলো গতকাল বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে চার রাজ্যেই বিজেপি জিতেছে। আর পাঞ্জাবে জিতেছে আম আদমি পার্টি। এই ফল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলকে চরম হতাশ করেছে। গত বছরের বিধানসভার ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে ভারতজুড়ে সংগঠন বিস্তৃত করার যে স্বপ্ন তৃণমূল বেঁধেছিল, তা নিমিষেই ধূলিসাৎ হলো।
এবারের পাঁচ রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনকে ‘সেমিফাইনাল’ হিসেবে বলা হচ্ছিল। কারণ ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে এত বড় নির্বাচন আর হবে না। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ। সেখানে বিপুল বিজয় পেয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে মণিপুর, উত্তরাখন্ড ও গোয়ায়। শুধু পাঞ্জাব গেছে আম আদমির দখলে। এখানে অবশ্য আগে ক্ষমতাসীন ছিল কংগ্রেস।
গত বছরের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে দলকে ভারতজুড়ে বিস্তারে সচেষ্ট হন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যে তিনটি ছোট রাজ্যকে বেছে নেন মমতা। এই তিন রাজ্য হলো উত্তর–পূর্ব ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরা, দক্ষিণ ভারতের আরব সাগর তীরের গোয়া ও উত্তর–পূর্ব ভারতের মণিপুর।
মমতা মনে করেছিলেন, এই তিন রাজ্যে দলের খাতা খুলতে পারলে তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল হিসেবে দেশের রাজনীতিতে নিজেদের স্থান পাকাপোক্ত করতে পারবে। তৃণমূল প্রথম ঝাঁপিয়ে পড়ে ত্রিপুরার দিকে। ইতিমধ্যে গত নভেম্বরে এসেও যায় ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা পৌর করপোরেশনসহ রাজ্যের বিভিন্ন পৌরসভার নির্বাচন। সেখানে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিজেপি। রাজ্যের ক্ষমতায় বিজেপি।
গত ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ত্রিপুরার ২০টি পৌরসভা ও রাজধানী আগরতলা পৌর করপোরেশন মিলে মোট ২২২টি ওয়ার্ডের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আদাপানি খেয়ে লড়লেও জিততে পেরেছে মাত্র একটি আসনে। তা–ও রাজধানীর বাইরে। অন্যদিকে বাম দল জিতেছে রাজধানীর বাইরের তিনটি ওয়ার্ডে। আর একটি ওয়ার্ডে জিতেছে স্থানীয় আঞ্চলিক দল তিপ্রা মথার এক প্রার্থী। তবে আগরতলা পৌর করপোরেশনের ৫১টি ওয়ার্ডের সব কয়টিতে হারে তৃণমূল। জেতে বিজেপি। এমন ফলাফলে তৃণমূল ২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় ত্রিপুরা রাজ্য বিধানসভার ৬০টি আসনের নির্বাচনে জয়ের আশা নিয়ে ইতিমধ্যে দল গোছাতে শুরু করেছে।
গত অক্টোবরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দেন, তিন মাসের মধ্যে গোয়ায় সরকার গড়বে তৃণমূল। আরও লড়বে মণিপুর বিধানসভা নির্বাচনেও। এ লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূল গোয়া ও মণিপুরে কাজ শুরু করে সাড়ম্বরে। কিন্তু বিধি বাম। শেষ পর্যন্ত এই গোয়া ও মণিপুরে বিজেপির কাছে গোহারা হারে তৃণমূল। গোয়া ও মণিপুরে একটি আসনেও জিততে পারেনি তৃণমূল। গোয়ার ৪০ আসনের মধ্যে বিজেপি জেতে ২০টিতে। কংগ্রেস ১১টিতে। তবে বিজেপি ঘোষণা দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে বিজেপিই গোয়ায় সরকার গড়বে।
অন্যদিকে মনিপুরের ৬০ আসনের মধ্যে বিজেপি জেতে ৩২ আসনে আর কংগ্রেস ৫টি আসনে এবং এনপিপি জেতে ৬টি আসনে। তৃণমূলের ভাগ্যে কোনো আসন জোটেনি। ফলে ছোট রাজ্য দখলের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে মমতার। যদিও গোয়াতে আটঘাট বেঁধে লড়াইতে নামে তৃণমূল। জোট করে মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি বা এমজিপির সঙ্গে। কিন্তু এমজিপি দুটি আসনে জিতলেও জিততে পারেনি তৃণমূল।
গতকাল ঘোষিত পাঁচ রাজ্যের ফল ভারতের আগামী লোকসভার নির্বাচনের জন্য বার্তাবহ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সেই বার্তা মমতার তৃণমূলের জন্য সুখকর নয়। তাই রাজ্যের বাইরে সংগঠন বিস্তারের আশা আপাতত ভাটা পড়ল তৃণমূলের।