পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত প্রায় ২২০০ কিলোমিটার। আসামের সঙ্গে আড়াই শ কিলোমিটারের মতো। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রায় ৬০ ভাগ পড়েছে এই দুই এলাকায়। আয়তন, ভাষা, সংস্কৃতি, ভালোবাসা ও রক্তপাত মিলেমিশে এই দুই সীমান্ত বাংলাদেশের জন্য খুবই স্পর্শকাতর।
এই দুই সীমান্তের অপর পাড়ে এখন নির্বাচনী উত্তেজনা চলছে। দুই জায়গায়, দুই নির্বাচনেই সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছে আরএসএস-বিজেপি পরিবার। জয়ের পাল্লা তাদের দিকেই ভারী। অথচ এক দশক আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না।
বেশ জোরেশোরে আরএসএস সদস্য বাড়ছে এখন বাংলাদেশ সীমান্তের অপর পারে। তাদের এই উলম্ব বৃদ্ধির মধ্যে লেপটে আছে অল্প-বিস্তর বাংলাদেশ-বিদ্বেষও। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে কেবল বিজেপির উত্থানটুকুই দেখা যাচ্ছে। এর পেছনের চালিকাশক্তি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের বিস্তার এবং তার আঞ্চলিক তাৎপর্য ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলাপ হয় কম।
আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব হেডগেওয়ার একদা কলকাতায় চিকিৎসাবিদ্যা পড়তেন। আরএসএসের দাবি, এই শহর থেকেই তিনি হিন্দুত্বাবাদী অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার প্রেরণা পান। সংগঠনের আরেক তাত্ত্বিক শ্যামাপ্রসাদের জন্মস্থানও এখানে। কিন্তু বাংলা ও আসামে আরএসএসের পক্ষে জমিন তৈরি বরাবরই কঠিন ছিল। এর কারণ, এই দুই অঞ্চলে রয়েছে উপমহাদেশের শক্তিশালী দুই ভাষা-সংস্কৃতির মানুষের বসতি। যারা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখেছিল ঐতিহাসিকভাবে।
বিশেষ করে অসমিয়া ঐতিহ্যের বিপরীতে হিন্দুত্ববাদের ভিত্তি তৈরি খুব কঠিন ছিল। স্বাধীনতার সময় বৃহত্তর আসামে আরএসএসের ‘প্রচারক’ ছিলেন মাত্র তিনজন—দাদারাও পরমার্থ, বসন্তরাও ওক এবং কৃষ্ণ প্রাণজাপি। গুয়াহাটি, শিলং ও দ্রিবুগড়ে তিনটি ‘শাখা’ খুলেছিলেন তাঁরা। পাঞ্জাব থেকে আসা ঠাকুর রাম সিং এসেও এ কাজে হাত লাগান। প্রায় পাঁচ দশক পর ১৯৯৮ সালে বৃহত্তর আসামে স্বয়ংসেবকদের এক সম্মেলনে সদস্যসংখ্যা দেখা গেল ৩৫ হাজার। আরও দুদশক পর তারা বিজেপিকে রাজ্যে ক্ষমতায়ই বসাতে পারলে।
পশ্চিমবঙ্গেও তারা পিছিয়ে নেই। ছয় দশক হলো এই রাজ্যে তারা কাজ করছে। ফল মোটাদাগেই দেখা যাচ্ছে এখন। প্রথমে তারা উত্তরবঙ্গ ও কলকাতার বড় বাজারে উত্তর প্রদেশ ও বিহারের অভিবাসী শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কাজ করত। বামফ্রন্টের দাপটে এগোতে পারছিল না ভালো করে। সে সময় আরএসএসের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মীরা তলোয়ার ও ত্রিশূল উঁচিয়ে রাম নবমীর মিছিল করেছেন, এমন ঘটনা বিরল। এখন সেটা করা যায়। এমনকি মালদার মতো অ-হিন্দুপ্রধান জেলায় সেটা বাড়তি আয়োজনে করা হয়।
আসামে এখন আরএসএস ক্যাডারের সংখ্যা আনুমানিক ২৫ হাজার। ৯০০-এর বেশি ‘শাখা’ আছে তাদের। নানা নামে অঙ্গ সংগঠন আছে ২১টি। বিদ্যাভারতী স্কুল আছে প্রায় ৫০০।
এ রকম প্রতিষ্ঠান বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গেও তুমুল গতিতে। বিদ্যাভারতীতে আরএসএসের ক্যাম্পিং হয়। সেসব ক্যাম্পে ‘দেশগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি’ নিয়ে কর্মীরা মতবিনিময় করেন।
পশ্চিমবঙ্গে আরএসএসের অঙ্গ সংগঠনের সংখ্যা আসামের চেয়েও বেশি বলে মনে করা হয়। আসামে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর আরএসএস-বিজেপি পরিবারের প্রধান টার্গেট পশ্চিমবঙ্গ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আরএসএস ‘মিশন-বেঙ্গল’ নামে আহমেদাবাদে বিশেষ সম্মেলনও করল বিজেপিকে নিয়ে। এখানেই আসন্ন ভোটে তৃণমূলের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে নেওয়ার বিস্তারিত রণকৌশল ঠিক করেন সংগঠকেরা।
পশ্চিমবঙ্গের ৩৪১টি ব্লকের সব কটিতে আরএসএসের ইউনিট আছে এখন। ৩ হাজার ৩৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত অর্ধেকে তারা পৌঁছে গেছে। এ বছরের মধ্যে তারা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্তত একটা শাখা করতে চায়। এ মুহূর্তে শাখার সংখ্যা দুই হাজার ছুঁই ছুঁই। দক্ষিণ বাংলায় এটা বেশি। উত্তরে কম। দক্ষিণে তাদের সাংগঠনিক জেলা রয়েছে ৩৩টি; উত্তরে ১৫টি। ২০১১ সালে সব মিলে শাখার সংখ্যা ছিল ৫৮০। এক দশকে চার গুণ হয়েছে। উত্তরবঙ্গে কম হলেও দ্রুত বাড়ছে। ২০১০-এর পর তিন গুণ বেড়েছে। আরএসএসের ‘শাখা’গুলো সচরাচর প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার বৈঠক করার রেওয়াজ। খেলাধুলা থেকে প্রার্থনা—সবই হয় এ রকম বৈঠকে। বছরে ছয়টি উৎসবও করে তারা।
পুরো পশ্চিমবঙ্গকে আরএসএস উত্তর-দক্ষিণে সাংগঠনিকভাবে ভাগ করে নিয়েছে। উভয় ভাগের মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামগুলোতেও তাদের ‘শাখা’ আছে। সেটা চলে ‘সেবা’র আদলে। ভানবাসী কল্যাণ আশ্রম, বনবন্ধু পরিষদ, সমাজসেবা ভারতী প্রভৃতি বহু নামে বহু সংগঠন আছে ‘সেবা’র জন্য। আর আছে বিশেষভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তোলার মতো বিশাল আইটি-টিম। এদের দক্ষতা বাড়াতে প্রায়ই ‘আইটি-মিলন’ নামের কর্মশালা হয়। আইটি-মিলন মানে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান বাড়ানো। সেটা আবার শুরু হয় ভোরে সূর্য নমস্কার এবং যোগসাধনা দিয়ে। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে এভাবেই সংস্কৃতিকে যুক্ত করে কর্মীদের তৈরি করা হয়। আরএসএসের পাশাপাশি প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনেরও আইটি শাখা রয়েছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টুইটারে দক্ষতা সব স্বেচ্ছাসেবকের স্বাভাবিক কাজের মধ্যে পড়ে। কেবল ভাবাদর্শ প্রচার নয়, প্রতিপক্ষকে ‘ট্রল’ করাও একটা ‘কাজ’।
আরএসএস সচরাচর সরাসরি রাজনৈতিক তৎপরতায় থাকে না এবং বিজেপির রাজনৈতিক অগ্রগতির কৃতিত্বও দাবি করে না। কিন্তু সামান্য ব্যতিক্রম বাদে সব রাজ্যে বিজেপির নেতৃত্বে আছেন তাদের তৈরি সংগঠকেরা।
স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনে সহসম্পাদক পর্যন্ত পদগুলো আরএসএসের জন্য সংরক্ষিত থাকে। গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ৪২ জন প্রার্থীর অন্তত ২৯ জন ছিলেন আরএসএস-ঘনিষ্ঠ। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ আরএসএসে ‘প্রচারক’ জীবন শুরু করেছিলেন ১৯৮৪ সালে।
তবে বিজেপি অন্য দল থেকে জার্সি বদল করেও অনেক ‘নেতা’ এনেছে। এ রকম ‘অধিগ্রহণ’-এর কারণ, তাদের সুপরিচিত মুখ কম। কিন্তু সাংগঠনিক শক্তি আছে। সেই শক্তির উৎস আরএসএস। সুপরিচিত কাউকে টেনে এনে সহজে ভোটের অঙ্কে জিতিয়ে আনতে পারে বিজেপি। ভোটকেন্দ্র নিয়ে বিজেপিকে বেশি ভাবতে হয় না। অর্থ নিয়েও নয়। এ দুটো আরএসএসই সামলাতে সক্ষম।
আসামে আরএসএস কীভাবে বেড়েছে, সেটা বিজেপির নির্বাচনী সফলতা থেকে আঁচ করা কঠিন নয়। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১২৬ আসনের মধ্যে তারা ৬০টি পায়। ২০১১ সালে তাদের আসন ছিল মাত্র ৫টি। তাদের এই অচিন্তনীয় উত্থান আরএসএসের পরিশ্রমেরই ফসল।
পশ্চিমবঙ্গে বহুদিন আরএসএসের প্রথম লক্ষ্য ছিল বামপন্থীদের হটানো। রাজ্যজুড়ে মাওবাদের উত্থানেও তারা উদ্বিগ্ন ছিল। এ রকম বামদের তারা ‘জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে দেখে। শুরুতে মমতাকে সমর্থন দিয়ে সে অধ্যায়ের ‘কাজ’ সমাধা করা হয়। এখন শেষ প্রতিবন্ধকতা হিসেবে খোদ মমতাকে সরানোর পালা। মমতার বড় ‘অপরাধ’— রাজ্যের সংখ্যালঘুদের সাহায্য-সহযোগিতা। মজার ব্যাপার, মমতার আমলেই ২০১৩ থেকে ২০১৮-এর মাঝে এখানে আরএসএসের উত্থান ঘটেছে সহজে। এই আমলেই তাদের স্কুল ও সেবাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে বিনা বাধায়। ২০১১ সালের নির্বাচনে বিজেপি এই রাজ্যে কোনো আসন পায়নি। ভোট পেয়েছিল মাত্র ৪ শতাংশ। পরের নির্বাচনে ভোট পায় ১০ ভাগ। আর এখন তারা মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখছেন ওয়াকিবহাল অনেকে। ২০১৯-এর সর্বশেষ লোকসভায় তারা ভোট পেয়েছে ৪১ ভাগ। আসন পেয়েছে রাজ্যের প্রায় অর্ধেক। তাদের জনপ্রিয়তা ক্রমে বাড়ছেও।
একই দৃশ্য আসামে। ২০১১-এর চেয়ে ২০১৬-এর বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপির ভোট বেড়েছে ৩০ ভাগ। ২০০৯-এর চেয়ে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট বেড়েছে ২০ ভাগ।
আরএসএস-বিজেপিকে একসময় হিন্দি বলয়ের সংগঠন ভাবা হতো। কিন্তু ওই অঞ্চলের বহু রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে আরএসএসের বিস্তার বেশি। সংগঠনের নেতারাই সেটা জানাচ্ছেন। ২০১৯ সালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনলাইনে উত্তর প্রদেশের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরএসএসের সদস্য হতে বেশি আবেদন পড়েছে। ২০১৭ সালে এ রকম আবেদন ছিল ৭ হাজার ৪০০। ২০১৮ সালে ছিল ৯ হাজার। আর ২০১৯-এর প্রথম ছয় মাসে ছিল ৭ হাজার ৭০০। একই সময় কেবল উত্তর প্রদেশ থেকে আবেদন পড়েছিল ৯ হাজার ৩৯২। পশ্চিমবঙ্গের লোকসংখ্যা উত্তর প্রদেশের অর্ধেক। এই হিসাবে আরএসএসের সদস্য হতে চাওয়া মানুষের হার পশ্চিমবঙ্গ থেকেই বেশি বলা যায়। আবেদনকারীদের মধ্যে ৭০ ভাগের বয়স ৩৫-এর মধ্যে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে আরএসএসের প্রতি তরুণদের এত আগ্রহের কারণ কী এবং বাংলাদেশের জন্য তার তাৎপর্য কী?
পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম— দুই জায়গাতেই আরএসএসের মূলমন্ত্র ‘ভারতমাতার সুরক্ষা’। এই সুরক্ষার বড় এক দিক ভারতকে ‘বাংলাদেশি সন্ত্রাসী’দের ‘আগ্রাসন’ থেকে বাঁচানো। মিছিল-সমাবেশে, লেখনীতে এসব নিয়ে রাখঢাক দেখা যায় না। উত্তর ভারতে তাদের এ রকম ‘বিদেশি’ প্রতিপক্ষ নেই। আসাম-পশ্চিমবঙ্গে এ রকম কল্পিত শত্রু সহজে পাওয়া যায় বাংলাভাষী থাকা এবং সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশ থাকার কারণে।
বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে মানুষ এসে আসাম-পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের হিস্যা কমিয়ে দিচ্ছে— এ রকম ভীতির আবহ ইতিমধ্যে এই দুই রাজ্যের মানুষের মধ্যে তৈরি করা গেছে। আসামে ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রধান অ্যাজেন্ডাই ছিল ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ তাড়ানোর প্রশ্ন। সেই ভীতির রাজনীতির সূত্রেই আসাম হয়ে এনআরসি কর্মসূচি পশ্চিমবঙ্গে আসি-আসি করছে। সঙ্গে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন করে অ-মুসলমানদের ভোটের হিস্যা বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার, আসামে এনআরসি শুরুর সময় অসমিয়াদের রক্ষার কথা বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গে বলা হচ্ছে, বাঙলি হিন্দুদের রক্ষার কথা। দুই জায়গাতেই এসব নতুন উদ্যোগে ন্যায্যতা খোঁজা হয় উভয় রাজ্যের মুসলমানপ্রধান সীমান্তঘেঁষা কিছু জেলার শুমারি দলিল সামনে রেখে। তাতে পরোক্ষে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হয়, এসব জেলায় ‘বাংলাদেশি’ আছে। আরএসএস সাহিত্যে দুই ধরনের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’র সন্ধান মেলে। মুসলমান বাংলাদেশিরা হলো ‘অনুপ্রবেশকারী’ আর হিন্দু বাংলাদেশিরা হলো ‘শরণার্থী’।
আসামে বহুকাল এক কোটি অবৈধ ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’র কথা বলে আরএসএস তুমুল রাজনীতি করে সংগঠন গুছিয়ে নিয়েছে। এনআরসি শেষে তার সত্যতা মেলেনি। এখন পশ্চিমবঙ্গে একইভাবে নতুন দফায় ‘এক কোটি অনুপ্রবেশকারী’র রাজনীতি শুরু হয়েছে, যা মূলত এনআরসি করিয়ে নিতেই। অথচ উভয় রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে কাজের সন্ধানে কারও যাওয়ার অর্থনৈতিক বাস্তবতা নেই। সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলনামূলক উন্নত। জীবনযাত্রার সূচকেও সীমান্তের উভয় পারের মধ্যে বাংলাদেশের জেলাগুলো এগিয়ে। তারপরও আরএসএসের নেতৃস্থানীয় এক সংগঠক জিঞ্চু বসুর এ রকম বক্তব্য দেখা গেল, ‘পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিম বাংলাদেশ হয়ে যাচ্ছে ক্রমে।’ এসব অদ্ভুত প্রচারণায় শক্তি জোগাতে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে তুলে ধরার সম্পূরক প্রচারণাও চলে নানান দিক থেকে। পুরোনো দিনের অনেক শরণার্থীকে সামনে এনে এ রকম প্রচারণাকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়া হয়।
তবে কেবল বাংলাদেশ-বিদ্বেষ নয়, আরএসএস নতুন কর্মীদের শৃঙ্খলা, সাহস ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাও দেয় এবং সেটা কোনো মরীচিকা নয়। কেন্দ্রে তারা দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আছে নির্বিঘ্নে। ১৭টি রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর সরকার রয়েছে। মার্চ-এপ্রিলে আসামের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ দখলেও মরিয়া তারা।
পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মানুষ কাকে ভোট দেবে, সেটা ওই দুই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ সীমান্তের অপর পারে সমৃদ্ধিই দেখতে চায়। আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশে নিজের ভূখণ্ড দিয়ে যোগাযোগ-সুবিধা দিতেও কার্পণ্য নেই বাংলাদেশের। কিন্তু ঢাকার জন্য উদ্বেগের দিক হলো আরএসএস-বিজেপি পরিবারের উত্থান রাজনৈতিক পূর্ণতা পেয়ে বাংলাদেশ ও বাংলাভাষীদের প্রতি বিদ্বেষ বাড়াতে পারে। তাতে সীমান্তের এদিকেও খারাপ প্রতিক্রিয়া হবে। এই দুই দৃশ্য মিলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রত্যাশিত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ায়। বাংলাদেশিরা বরাবর চেয়েছে সীমান্তের ওপারে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সবল উপস্থিতি, যারা বাংলাদেশকে দেখবে ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধকালীন সহানুভূতির চোখ দিয়ে।
আলতাফ পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক