করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাস্ক পরা বাধ্যমূলক করেছে রাজ্য সরকার। গতকাল রোববার এ বিষয়ে এক নির্দেশিকা জারি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা।
এর আগে দিল্লি, মুম্বাই, আহমেদাবাদ, উত্তর প্রদেশ ও ওডিশা সরকার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বাড়ির বাইরে বের হলে নাক–মুখ ঢাকা এখন বাধ্যতামূলক। তবে মাস্ক পরতে হবে মানে এই নয় যে সবাইকে এন-৯৫ মাস্ক পরতে হবে। সাধারণভাবে বাড়িতে তৈরি মাস্কও চলবে। মোটকথা, বাইরে বের হলেই মুখ ঢেকে বের হতে হবে। নারীরা চাইলে ব্যবহৃত দোপাট্টা, গামছা, ওড়না বা রুমাল দিয়েও মুখ ঢাকতে পারবে। আর এই নিয়ম না মানলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। মুখ না ঢেকে বের হলে নারী-পুরুষ যেকাউকেই বাড়িতে ফেরত পাঠাতে পারবে পুলিশ।
উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার ৪২টি স্পর্শকাতর এলাকায় আজ সোমবার থেকে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। গতকাল বিকেলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার এক নির্দেশে বলেছেন, লকডাউন কঠোরভাবে মানতে হবে। লকডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লকডাউন ভাঙলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে গতকাল রাজ্য সচিবালয় নবান্নকে আবার জীবাণুমুক্ত করা হয়।
এদিকে সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র গতকাল এক ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেছেন, করোনার সঠিক পরীক্ষা হচ্ছে না এই রাজ্যে। এত দিনে মাত্র দুই হাজার মানুষের পরীক্ষা হয়েছে। অথচ করোনা সন্দেহভাজনদের নিয়মিত পরীক্ষা হলে মানুষের আতঙ্ক কমত। মানুষ নিশ্চিত হতে পারত। তিনি করোনার মৃত এবং আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা লুকানোরও অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, প্রকৃত সংখ্যা দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। এতেও মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় লকডাউন মানছে না মানুষ—গত শুক্রবার এ অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কড়া চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠির কঠোর সমালোচনা করে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, এটা রাজ্যের এখতিয়ারে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ। এভাবে নাক গলানো উচিত নয়। কেন্দ্র এসব চিঠি দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ভাইরাস ঢোকানোর চেষ্টা করছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব এবং পুলিশের মহাপরিচালককে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় একশ্রেণির মানুষ লকডাউন অমান্য করে চলেছে। ফলে ওই সব এলাকা করোনার ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে মানিকতলা, রাজাবাজার, একবালপুর, নারকেলডাঙ্গা, মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ, তপশিয়া।
এর আগে গত বুধবার করোনার তথ্য লুকানোর প্রতিবাদে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম। তিনি তাঁর আবেদনে দাবি করেন, রাজ্য সরকার করোনা নিয়ে প্রকৃত তথ্য এড়িয়ে যাচ্ছে। তারা করোনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ভারতের আইসিএমআর বা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের গাইডলাইন মানছে না। নিজেদের মতো করে কাজ করছে। প্রকৃত তথ্য দিচ্ছে না। লুকোনো হচ্ছে প্রকৃত মৃত্যু ও আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। তাই তাঁর আবেদন অবিলম্বে রাজ্য সরকার করোনা নিয়ে প্রকৃত তথ্য জানাক।
এ মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপংকর দত্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে। মামলার শুনানি গ্রহণ করা হয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। আদালত আবেদনকারীর অভিযোগ শুনে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে করোনা নিয়ে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং করোনা এই রাজ্যে কতটুকুই–বা বিস্তার করেছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।