পশ্চিমবঙ্গে করোনা চিকিৎসা, ত্রাণ ও রেশন বণ্টন নিয়ে শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী বিজেপির কথার লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
তৃণমূল বলছে, তারা মুখ্যমন্ত্রী মমতার নেতৃত্বে রাজ্যে করোনা প্রতিরোধে সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে। মানুষও ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে। লকডাউন কার্যকর করে রাজ্যে মৃত্যু ও সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। তারা নিয়মিত করোনার নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। গতকাল পর্যন্ত রাজ্যে ১০ হাজার ৮৯৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
রাজ্য বিজেপি দাবি তুলেছে, পশ্চিমবঙ্গে করোনার চিকিৎসা যথাযথভাবে হচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষাও হচ্ছে না। লকডাউন ভাঙা হচ্ছে। রেশন ও ত্রাণ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি। বহু গরিব ত্রাণ ও রেশনের চাল-গম পাচ্ছে না। তা খেয়ে ফেলছেন তৃণমূলের নেতারা। রাজ্য সরকার করোনায় মৃত ও এ ভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রমাণ করতে চাইছে, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এখানে ভাইরাসে সংক্রমিত মানুষ ও মৃতের সংখ্যা কম।
তবে পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ধীরে ধীরে কমে আসছে মৃত ও কোভিট–১৯ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে রোববার বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছে আরও দুজন। সব মিলিয়ে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০। গতকালই রাজ্যে প্রথম মারা গেছেন একজন চিকিৎসক। গতকাল সংক্রমিত হয়েছে ৩৮ জন। রাজ্যে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে ৫৬৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১০৫ জন।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা বাড়লেও গোটা দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এখন দেশের ৩০০টি জেলা করোনামুক্ত। ১৯৭টি জেলায় অল্প সংখ্যক আক্রান্ত রয়েছে। দেশের 'রেড স্পট' তালিকাভুক্ত জেলাগুলো ধীরে ধীরে করোনামুক্ত হচ্ছে।
করেনায় মৃত ও সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা লুকানোর অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টে ইতিমধ্যে দুটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে।
গতকাল বিজেপি রাজ্যজুড়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে করোনার তথ্য লুকানো ও রেশন–ত্রাণের চাল-গম আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন নেতার বাসভবনের সামনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাতে প্লাকার্ড নিয়ে তারা এই প্রতিবাদে শামিল হয়।
প্রতিবাদ দেখে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, 'ওরা (বিজেপি) বাড়িতে থেকে প্রতিবাদ করছে। আমরা মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। ওরা থাকে বাড়িতে, আমরা থাকি মানুষের পাশে।'
পশ্চিমবঙ্গে করোনা নিয়ে নানা অভিযোগের তদন্ত করতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে দুটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠায় গত সোমবার। একটি দল শিলিগুড়িসহ উত্তর বঙ্গ এবং অন্যটি কলকাতাসহ দক্ষিণ বঙ্গে করোনা পরিস্থিতি দেখতে এলেও রাজ্য সরকার তাদের প্রথম দিকে সহযোগিতা করেনি।