লাদাখে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে নিহত সেনাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দুই সেনা রয়েছেন। তাঁরা হলেন বীরভূম জেলার বাসিন্দা রাজেশ ওরাং এবং আলীপুরদুয়ার জেলার বাসিন্দা বিপুল রায়। রাজেশ মাত্র পাঁচ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। আগামী বছর বিপুল রায়ের স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার কথা ছিল। এই দুই সেনার মৃত্যুতে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গজুড়ে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বুধবার শহীদ হওয়া দুই সেনার পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি করে অনুদান এবং ওই দুই সেনা পরিবারের একজন করে আত্মীয়কে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন।
চীনে ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিল। জাতীয় কংগ্রেস, বিজেপি, বিজেপির যুব মোর্চা এবং বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই চীনের সেনা হামলার প্রতিবাদ করে সে দেশের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে।
বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি বা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ গতকালই কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক সুরঞ্জন সরকার। মিছিলকারীরা কলকাতার চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এখানেই এবিভিপি নেতা সুরঞ্জন সরকার বলেন, ‘ভারতীয় সেনারা যেমন বুলেটের জবাব বুলেটে দিয়েছে, তেমনি আমরাও চীনা পণ্য বর্জন করে ওয়ালেটে জবাব দেব। আমরা চীনা পণ্য বর্জন করে চীনা অর্থনীতিকে ভেঙে দেব। আপনারা চীনা সেনাবাহিনীর এই ঘৃণ্য হানার যোগ্য জবাব দিন। কলকাতার চীনা দূতাবাসের সামনে সকাল থেকে এবিভিপি শুরু করে প্রতিবাদ কর্মসূচি। তারা ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে চীনা দূতাবাসের প্রবেশপথের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে। দাবি তোলে চীনা পণ্য বর্জনের।
বিজেপির যুব মোর্চাও চীনা আগ্রাসনের প্রতিবাদে কলকাতায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেন। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে চীনের পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়। কলকাতার যোগাযোগ ভবনের কাছে এসে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে চীনের প্রেসিডেন্টের কুশপুতুল দাহ করা হয়।
কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেয় কংগ্রেস, কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ এবং সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। তারা মধ্য কলকাতা এবং পার্কস্ট্রিট, মল্লিকবাজার, বড়বাজার, রাসবিহারী এভিনিউতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিহত শহীদদের প্রতি সম্মান জানান। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেন। কংগ্রেস বড়বাজারে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হয়ে চীনের পণ্য পোড়ায়। বিজেপি রাসবিহারী এভিনিউতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হয়। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন সিপি বা ছাত্র পরিষদ কলেজ স্ট্রিটে প্রতিবাদে অংশ নেয়।
ভারতের কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি) চীনের অন্তত ৫০০ পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকার পণ্য আমদানি না করার জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ভারতে চীন থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি ডলারের। আর ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৮৬১ কোটি ডলার। পাশাপাশি ২০১৫ সালে চীন ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯৮৯ কোটি ডলারের পণ্য আর ২০১৯ সালে চীনের সেই পণ্যের আমদানি বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৫২ কোটি ডলার। ভারত চীন থেকে আরও আমদানি করে আসছে মোবাইল, আইফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ গাড়ির যন্ত্রপাতি টিভি, ফ্রিজের মতো পণ্য।