আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দলকে চাঙা করতে পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে আসা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘বাঙালি’ হয়ে উঠতে হবে—এমন পরামর্শ দিয়েছিল জেপি-আরএসএস ঘেঁষা বুদ্ধিজীবীরা। গত অক্টোবরের শেষে কলকাতায় বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ে এক বৈঠকে এ পরামর্শ দেন তাঁরা। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিব প্রকাশ, বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়, রাহুল সিনহা প্রমুখ।
বুদ্ধিজীবীরা বলেন, প্রচার চালানোর সময় প্রয়োজনে ধুতি পড়ে ‘খাঁটি বাঙালি’সাজে মাঠে নামতে হবে বিজেপি নেতাদের।
সেই পরামর্শ মতো এবার বাঙালি সাজে প্রচারে নামার উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি। এর আগে বিজেপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ইংরেজিতে চিঠি দেওয়া হতো। আসামের তিনসুকিয়ায় ৫ জন বাঙালিকে হত্যার ঘটনায় রাজ্যের পরিস্থিতি সামলাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে বাংলায় চিঠি দেন। গতকাল শনিবার ওই চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘গত বৃহস্পতিবার আসামের তিনসুকিয়ার হত্যাকাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গবাসী গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আসামের মতো স্পর্শকাতর প্রদেশে এমন ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। কেন্দ্র সরকার বাঙালি হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এ রকম আশা করেন। আসাম সরকার হত্যাকারীদের যথাযোগ্য শাস্তিবিধান করে সেই এলাকার হিন্দু বাঙালির মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবেন এবং ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা যাতে না ঘটে তা সুনিশ্চিত করবেন। এই আশা রাখছি’।
তৃণমূলের প্রতিনিধিরা আজ আসাম যাচ্ছেন:
এদিকে আজ রোববার আসামের তিনসুকিয়ায় ৫ বাঙালি হত্যার প্রতিবাদে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের তিন সাংসদ। তাঁরা সেখানে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সঙ্গে আছেন—এমন বার্তা দেবেন তারা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাবেন।
এদিকে আসাম সরকারও জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের সাংসদদের আসামে ঢুকতে কোনো বাধা দেবে না তাঁরা। এর আগে গত আগস্টে আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বাদ যায় সেই রাজ্যের ৪০ লাখ বাঙালির নাম। আর এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। সেদিনও কলকাতা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আসামের শিলচরে যান ওখানের একটি নাগরিক কনভেনশনে যোগ দিতে। কিন্তু শিলচরে পৌঁছার পর এই প্রতিনিধি দলকে কার্যত আটকে রাখে আসাম পুলিশ। তাঁদের বিমানবন্দর থেকে বাইরে বের হতে দেয়নি পুলিশ। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন তৃণমূলের ৬ সাংসদ, এক বিধায়ক এবং এক মন্ত্রী।
কিন্তু এবার আসাম সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এবার আর তাদের তিনসুকিয়ায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে না।
রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক কে এস দ্বিবেদী জানিয়েছেন, তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে আসামের ডিব্রæগড় বিমান বন্দর থেকে কড়া পাহারায় নিয়ে যাওয়া হবে ঘটনাস্থলে। কথা বলতে দেওয়া হবে নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
রাজ্যব্যাপী কালা দিবস পালন
এদিকে আসামের ৫ বাঙালি হত্যার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার কংগ্রেস রাজ্যব্যাপী কালো দিবস পালন করেছে। এদিন কলকাতার চার প্রান্ত থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়।
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র আসামের বিজেপি সরকারের বরখাস্তের দাবি তোলেন। এর আগে গত শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিএমও আসামের গণহত্যার প্রতিবাদে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করে। সেই সমাবেশ থেকেও দাবি ওঠে আসাম সরকারকে বরখাস্তের।