সকালে পড়তেন কলেজে। আর দুমুঠো খাওয়ার জন্য রাতে কাজ করতে হতো স্থানীয় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে। সেখানেই নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করতেন রঞ্জিত রামাচন্দ্রন। এভাবেই কাটত তাঁর ২৪ ঘণ্টা। সেই রঞ্জিত এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নৈশপ্রহরীর কাজ করেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।
পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি নিজের জীবনের সংগ্রামের এ কাহিনি জানিয়েছেন রঞ্জিত নিজেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রঞ্জিত বলেছেন, কাসরাগোডের পানাথুরের বিএসএনএল কোম্পানির টেলিফোন এক্সচেঞ্জে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন তিনি। ওই জেলার পায়াস টেনথ কলেজে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকে পড়তেন। সেই পড়াশোনা শেষ করে মাদ্রাজে গিয়েছিলেন রঞ্জিত।
ফেসবুকে ৯ এপ্রিল এই পোস্ট দিয়েছিলেন রঞ্জিত। সেখানে তিনি লিখেছেন, মাদ্রাজে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়েই গ্যাঁড়াকলে পড়েছিলেন। কারণ, তখন পর্যন্ত মালায়ালম ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানতেন না রঞ্জিত। সেই সঙ্গে ছিল জীবিকার তাড়না। একপর্যায়ে পিএইচডির পড়াশোনাও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন রঞ্জিত। তবে তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিলেন সুভাষ নামের এক শিক্ষক। আর সেই উৎসাহেই এগিয়ে গিয়েছিলেন রঞ্জিত।
একপর্যায়ে গত বছর নিজের ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন রঞ্জিত রামাচন্দ্রন। বর্তমানে বেঙ্গালুরুর ক্রাইস্ট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ২৮ বছর বয়সী রঞ্জিত। তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি দিনে কলেজে যেতাম, আর রাতে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে কাজ করতাম।’ পিএইচডি করার সময়কার কঠিন পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে রঞ্জিত লিখেছেন, ‘আমি তখন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং নিজের স্বপ্ন অনুধাবন করতে পারি।’
রঞ্জিতের ফেসবুক পোস্ট এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত এই পোস্টে ৩৭ হাজার ‘লাইক’ পড়েছে। ফেসবুকে অনেক ব্যবহারকারীই রঞ্জিতকে নিজেদের অনুপ্রেরণার উৎস বলে মন্তব্য করেছেন।
রঞ্জিত বলেন, ‘পোস্টটি যে এভাবে ভাইরাল হবে, তা আমি কখনো ভাবিনি। আমি নিজের জীবনের কাহিনি জানিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো তা অনেককে অনুপ্রেরণা দিতে পারে। আমি চাই, সবাই ভালো স্বপ্ন দেখুক এবং নিজেদের স্বপ্নের জন্য লড়াই করুক। আমি চাই, অন্যরা এ থেকে অনুপ্রেরণা পাক এবং নিজেদের সাফল্যকে খুঁজে নিক।’