চাঞ্চল্যকর নারদা দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চার নেতার জামিন বাতিল আদেশের পুনর্বিবেচনার শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ গঠন করেছেন কলকাতা হাইকোর্ট। গতকাল শুক্রবার পাঁচ সদস্যের এই বেঞ্চ গঠন করা হয়।
নতুন এই বেঞ্চের সদস্যরা হলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি সৌমেন সেন। হাইকোর্টের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বেই গড়া হয়েছে এই ৫ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ।
এর আগে গতকাল শুক্রবার প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই চার নেতার জামিনের ভিন্ন ভিন্ন মতামত দেন। এরপর নতুন এই বেঞ্চ গঠন করা হলো। আগামী সোমবার নতুন এই বেঞ্চে ওই চার নেতার জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
পশ্চিমবঙ্গের ওই চার নেতা হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল নেতা, কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম, সাবেক মন্ত্রী ও নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের গ্রেপ্তার করে গত সোমবার সকালে কলকাতার নিজাম প্যালেস নেওয়া হয়।
এই চার নেতাকে গ্রেপ্তারের পর বেশ কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে গ্রেপ্তারের পর রাতে জামিন পান তাঁরা। কিন্তু পরে ওই রাতেই সিবিআই জামিন বাতিলের আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট জামিন বাতিল করেন। এ ছাড়া দলের নেতাদের মুক্তি দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই কার্যালয়ে গিয়েছিলেন এবং নিজেও গ্রেপ্তার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মমতার এই ধরনায় কোনো সুফল মেলেনি।
এদিকে গতকাল শুক্রবার শুনানির সময় শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অভিষেক মনু সিংভি ও সিদ্ধার্থ লুথরা এবং সিবিআইয়ের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা।
আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি শুক্রবার আদালতকে বলেন, জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করতে অবিলম্বে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হোক। অন্যথায় তৃতীয় বিচারপতির কাছে পাঠানো হোক মামলাটি।
এরপর আদালত জানিয়ে দেন, যত দিন বা যতক্ষণ পর্যন্ত না বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন হয়, ততক্ষণ বা তত দিন পর্যন্ত এই চার নেতা তাঁদের নিজ নিজ বাড়িতে গৃহবন্দী থাকবেন। এ সময় তাঁরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। চিকিৎসা থেকে অন্য সব সুবিধা পাবেন তাঁরা। তবে তাঁদের থাকতে হবে সিবিআইয়ের নিয়ন্ত্রণে।
আদালত বলেন, এ সময় চার নেতা বাইরে বের হতে পারবেন না। কথা বলতে পারবেন ফোনে ও ভার্চ্যুয়ালি। নির্দেশও দিতে পারবেন দপ্তরের বিভিন্ন কাজের।
২০১৬ সালের মার্চে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের প্রাক্কালে ১৩ তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীর ঘুষ নেওয়ার এক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালে মার্চে এই নারদ কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইর হাতে। সেই মামলায় আসামি করা হয় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন চার মন্ত্রীসহ সাংসদ, বিধায়ক ও অন্য তৃণমূল নেতাদের।