ভোটের আগে রাজ্যের নতুন জনসংখ্যা নীতি ঘোষণা করতে চলেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রোববার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে এই নীতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী জানাবেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যাঁরা সাহায্যের হাত বাড়াবেন তাঁরা কোন ধরনের বিশেষ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
এই নীতির ভিত্তিতে আনা নতুন খসড়া বিলে বলা হয়েছে, দুটির বেশি সন্তানের বাবা-মা পঞ্চায়েত বা পৌরসভার মতো কোনো স্থানীয় সংস্থার নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। তাঁরা রাজ্য সরকারের চাকরিতে দরখাস্ত করতে পারবেন না। পদোন্নতি পাবেন না। কোনো ধরনের রাজ্য সরকারি ভর্তুকি পাওয়ারও যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
উত্তর প্রদেশ রাজ্য আইন কমিশনের ওয়েবসাইট জানিয়েছে, জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীল করার মধ্য দিয়ে রাজ্যের মানুষের কল্যাণে এই খসড়া বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। এই বিল যা কিনা নতুন জনসংখ্যা নীতির অঙ্গ, সে বিষয়ে রাজ্যের জনসাধারণকে ১৯ জুলাইয়ের মধ্য অভিমত জানাতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও তাঁর রাজ্যের জন্য এ ধরনের এক নীতি রূপায়ণের কথা জানিয়েছেন। তাঁর লক্ষ্য দুটির বেশি সন্তান যাঁদের নেই তাঁদের ঋণ মওকুফ বা সরকারি আবাস পাওয়ার মতো রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। এভাবে তিনি রাজ্যে জনবিস্ফোরণে রাশ টানতে চান। হিমন্ত অবশ্য বলেছেন, তাঁর এই নীতি চা–বাগান এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে না।
দুই সন্তানের জনক-জননী যাঁরা রাজ্য সরকারের চাকরিজীবী, তাঁরা কী কী সুবিধা পাবেন, খসড়া বিলে তা জানানো হয়েছে। যেমন, গোটা চাকরিজীবনে তাঁরা বেতনে দুটি অতিরিক্ত ‘ইনক্রিমেন্ট’ বা বৃদ্ধি পাবেন। পুরো ১২ মাস বেতন ও ভাতাসহ মাতৃত্বকালীন বা পিতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। আর পাবেন জাতীয় পেনশন তহবিলে চাকরিদাতার দিক থেকে ৩ শতাংশ অতিরিক্ত অনুদান। দুই সন্তানের জনক-জননী গৃহ নির্মাণে স্বল্প সুদে ঋণ পাবেন। স্বামী-স্ত্রী পাবেন বিনা মূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা। যাঁদের সন্তানসংখ্যা একটি সেই সরকারি কর্মী পাবেন চারটি বাড়তি ‘ইনক্রিমেন্ট’। স্নাতক স্তর পর্যন্ত নিখরচার শিক্ষা। কন্যাসন্তানের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি ও সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা। এই আইন রূপায়ণে একটি রাজ্য জনসংখ্যা তহবিল গঠন করা হবে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি তাঁর সরকারের নতুন জনসংখ্যা নীতির ব্যাখ্যায় জানিয়েছেন, তিনি চান মানুষকে প্রকৃত শিক্ষিত করে তুলতে। তাঁর কথায়, দারিদ্র্য ও অশিক্ষা জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। কোনো কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার প্রবল অভাব রয়েছে। নতুন নীতিতে তা দূর করার দিকে নজর দেওয়া হবে। সে জন্য সম্প্রদায়ভিত্তিক সচেতনতা গড়ে তোলা হবে।
তবে সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের সর্বত্র স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উন্নতি করা হবে। সদ্যোজাত শিশু থেকে শুরু করে সবাই যাতে উন্নত পরিষেবা পান, তা দেখা হবে।
বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে জনসংখ্যা–সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ধারণার বিকাশ ঘটানো হবে, যাতে তাঁরা পরবর্তীকালে সচেতন হতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই নীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখা। মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার মধ্য দিয়েই নতুন নীতির রাজনৈতিক লক্ষ্য স্পষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাই এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
নতুন এই নীতির মেয়াদ ১০ বছর। ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। সরকারি সূত্রের খবর, নতুন এই নীতিতে গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা সহজলভ্য করার দিকে যেমন নজর দেওয়া হবে তেমনই গর্ভপাত ঘটানোর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর অবকাঠামো তৈরি করা হবে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার কর্মসূচি। এ ক্ষেত্রে কম সন্তানের অভিভাবকদের নানা ধরনের উৎসাহ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
উত্তর প্রদেশ রাজ্য বিধানসভার ভোট আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে। তার আগে এই নতুন জনসংখ্যা নীতির মধ্য দিয়ে বিরোধীরা সিঁদুরে মেঘের আভাস দেখতে পাচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র অংশু অবস্থি বলেছেন, সাড়ে চার বছর ধরে রাজ্য পরিচালনায় চরম ব্যর্থতার ছাপ রাখার পর মুখ্যমন্ত্রী এখন সাম্প্রদায়িকতায় উসকানি দিতে চাইছেন।
এমন একটা বিষয়কে হাতিয়ার করতে চাইছেন, যা রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবে। মানুষকে সন্দিহান করে তুলবে। সমাজবাদী পার্টি নেতা অনুরাগ ভাদোরিয়া বলেছেন, ভোটের মুখে যোগী সরকার এমন একটা বিষয় ধরতে চাইছেন, যা অতীব স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত। এত দিন সব প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়ে এখন নতুন স্বপ্ন আঁকড়ে ধরতে চাইছে।
উত্তর প্রদেশে বর্তমান প্রজননহার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। রাজ্য সরকারের মুখপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজ্যের আদর্শ প্রজননহার হওয়া উচিত ২ দশমিক ১ শতাংশ।