দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে বিজেপি নেতাদের নাম নেই

ভারতে দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে সরকারের ভূমিকায় চোখে কালো কাপড় বেঁধে বিরোধী দল তৃণমূলের দুই সাংসদের প্রতিবাদ। গত মার্চ মাসে তোলা
এএফপি ফাইল ছবি

দিল্লি দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে এবার চার্জশিট দেওয়া হলো বিরোধী নেতা–নেত্রীদের নামেও। দিল্লি পুলিশ সম্প্রতি যে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে কংগ্রেস নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সালমান খুরশিদ ও সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাতের বিরুদ্ধে। তাঁরা ছাড়া অভিযোগ আনা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও স্বরাজ ইন্ডিয়া দলের নেতা যোগেন্দ্র যাদবের বিরুদ্ধেও। কোনো চার্জশিটেই অবশ্য বিজেপির কোনো নেতার নাম নেই। সংবাদ সংস্থা পিটিআই এই খবর দিয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লির কোনো কোনো এলাকায় হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা বাধে। দাঙ্গায় মোট ৫৪ জনের মৃত্যু হয়। নষ্ট হয় বহু সম্পত্তি। দিল্লি পুলিশ দাঙ্গার তদন্ত করছে। ১৭ সেপ্টেম্বর দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে ১৭ হাজার পৃষ্ঠার চার্জশিট পেশ করা হয়। তাতে মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর জমা দেওয়া হয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট। তাতে ‘প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে’ সালমন খুরশিদ, বৃন্দা কারাত, প্রশান্ত ভূষণ, যোগেন্দ্র যাদবদের নাম দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে নাম রয়েছে দিল্লির সাবেক বিজেপি সাংসদ উদিত রাজেরও। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে তিনি বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। চার্জশিটে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বিরোধী সমাবেশে তাঁরা ‘প্ররোচনামূলক’ ভাষণ দিয়েছেন, যার ফলে দাঙ্গা শুরু হয়।

সালমান খুরশিদ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা। তিনি উত্তর প্রদেশের কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। মনমোহন সিং মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। চার্জশিটে নাম থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দাঙ্গার তদন্ত ও চার্জশিট নিয়ে ইতিমধ্যে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। মহারাষ্ট্রের সাবেক পুলিশ কমিশনার জুলিও রেবেইরোসহ দেশের অর্ধ শতাধিক পুলিশের সাবেক কর্তা দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছেন। বিস্ময় আরও এই কারণে যে অনুরাগ ঠাকুর, কপিল মিশ্র, প্রবেশ ভার্মার মতো যে বিজেপি নেতারা সিএএ ও এনআরসি আন্দোলনকারীদের সরাসরি হুমকি দিয়েছিলেন, পুলিশের সামনে ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার’ কথা বলেছিলেন, তাঁদের একজনের নামও চার্জশিটে রাখা হয়নি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর জনসভায় স্লোগান তুলেছিলেন ‘দেশকে গদ্দারোঁ কো’, জনতা জবাবে বলেছিল ‘গোলি মারো শালো কো’। তাঁর বিরুদ্ধেও চার্জশিট নীরব। চার্জশিটে অভিযোগ শুধু তাঁদের বিরুদ্ধে যাঁরা সিএএ–এনআরসির বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। শাহিনবাগের অবরোধে প্রতিবাদ জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। অনেকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ), অস্ত্র আইন ও দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিনা বিচারে আটকও করা হয়েছে।