ভারতের দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে অবিলম্বে আলোচনা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পদত্যাগের দাবিতে ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ দিনভর অচল থাকল। বিরোধীরা সমস্বরে দাবি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দাঙ্গা নিয়ে বিবৃতি দিতে হবে।
সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব আজ সোমবার থেকে শুরু হয়। কিন্তু দাঙ্গা নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদ ও দাবির মুখে সভা চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
বিরোধীদের দাবি ছিল তিনটি। দুই কক্ষেই বিরোধীরা দাঙ্গা আলোচনার দাবিতে প্রয়োজনীয় নোটিশ জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যসভা ও লোকসভা কোনো কক্ষের স্পিকারই সেই দাবি মানেননি। বিরোধীদের দ্বিতীয় দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি। কোনো স্পিকারই প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে নির্দেশ দেননি। তৃতীয় দাবি ছিল অমিত শাহর পদত্যাগ। দাবি লেখা পোস্টারও বিরোধীরা দুই কক্ষে নিয়ে এসেছিলেন। আলোচনার দাবি মানতে স্পিকার রাজি না হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ওয়েলে নেমে আসেন। ফলে দুই কক্ষই বেলা দুইটা পর্যন্ত মুলতবি করে দেওয়া হয়। বেলা দুইটার পরও অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে। একটা সময় লোকসভায় সরকার ও বিরোধী পক্ষের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয়। স্পিকার ওম বিড়লা সঙ্গে সঙ্গেই সভা দিনের মতো মুলতবি করে দেন।
লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু দুজনেরই বক্তব্য এক। দুজনেই বিরোধী সদস্যদের বলেন, দিল্লির দাঙ্গা খুবই উদ্বেগের। অবশ্যই এ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। কিন্তু এখন সবার উচিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। এই অবস্থা দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য উপযুক্ত নয়। বিরোধীরা এই যুক্তি মানেননি।
দাঙ্গা নিয়ে সরকার সর্বত্র এই যুক্তি দিয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই, বিশেষ করে দিল্লির নির্বাচনী প্রচারের সময় শাসক দলের নেতারা লোক খেপানো ভাষণ দিয়েছেন। তাদের এই ‘হেট স্পিচ’ মানুষকে হিংসাত্মক হতে প্ররোচিত করেছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, সাংসদ পরবেশ সিং ভার্মা, সাবেক বিধায়ক কপিল মিশ্রসহ অনেকের বিরুদ্ধে ভাষণের মধ্য দিয়ে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। দিল্লির দাঙ্গার পর ওই তিনজনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অভিযোগ দাখিল করার নির্দেশও দিয়েছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মুরলীধর। মধ্যরাতে নিজ গৃহে আদালত বসিয়ে নেতাদের হেট স্পিচ শুনিয়ে তিনি সলিসিটার জেনারেলকে বলেছিলেন, তিনি যেন পুলিশ কমিশনারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। সেই রাতেই মুরলীধরকে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলি করে দেওয়া হয়।
পরের দিন দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে কেন্দ্রের পক্ষে বলা হয়, নেতাদের হেট স্পিচের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার উপযুক্ত সময় এটা নয়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই দিল্লি পুলিশ ব্যস্ত। প্রধান বিচারপতি সেই যুক্তি মেনে দিল্লি পুলিশকে এক মাস সময় দিয়েছেন। আজ লোকসভা ও রাজ্যসভায় দাঙ্গা পরিস্থিতি আলোচনার অনুমতি না দেওয়ার কারণ হিসেবে দুই কক্ষের স্পিকাররা ওই যুক্তিরই অবতারণা করেন।
বিরোধীরা আজ পার্লামেন্ট ভবন চত্বরে গান্ধীজির মূর্তির সামনেও মৌন বিক্ষোভ দেখান। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও তাতে শামিল হয়েছিলেন। সরকার যে মূক ও বধির, তা বোঝাতে তৃণমূল কংগ্রেস সদস্যরা মুখে-চোখে কালো কাপড় বেঁধে এসেছিলেন।