কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অকপট স্বীকারোক্তি, জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। কিন্তু সেই স্বীকারোক্তির পাশাপাশি তাঁর মূল্যায়ন, সেই সময়কার ঘোষিত জরুরি অবস্থার সঙ্গে আজকের বাস্তব পরিস্থিতির মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করলেও ইন্দিরা গান্ধী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিকীকরণ করেননি। আজ বুধবার বিজেপি বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) তা করছে। রাহুলের এই মূল্যায়নের সমালোচনা করতে বিজেপি নেতৃত্ব দেরি করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অধ্যাপক ও সুপরিচিত অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর সঙ্গে অংশ নেন রাহুল গান্ধী। সেখানেই তিনি তাঁর দাদি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ২১ মাসের জন্য জারি হওয়া জরুরি অবস্থা সম্পর্কে রাহুল বলেন, ‘অবশ্যই তা একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। ইন্দিরা গান্ধী নিজেও পরে তা স্বীকার করেছিলেন।’ এরপরই বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা টেনে রাহুল বলেন, ‘জরুরি অবস্থা ভুল হলেও কংগ্রেস কখনো দেশের সংবিধানস্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেনি। সত্যি বলতে, সেই ক্ষমতাও কংগ্রেসের নেই। দলীয় গঠনতন্ত্র তার অনুমোদনও দেয় না।’
ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন রীতিমতো ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ভারতে জরুরি অবস্থা জারি সেই প্রথম ও সেই শেষ। কিন্তু বিরোধী মহল ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ বলে অভিহিত করছেন। রাহুলের চোখে সেই সময় ও এই সময়কার পরিস্থিতির মৌলিক পার্থক্য হলো, কংগ্রেস তখন গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় লোক দিয়ে দখল করেনি। আজ বিজেপি ও আরএসএস ঠিক সেটাই করছে।
রাহুল তাই বলেছেন, ভোটে বিজেপি পরাস্ত হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সংঘের আদর্শ মানা লোকদের হটানোর উপায় নেই। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য ও নিরপেক্ষতা রক্ষাই গণতন্ত্রের পরিচয়, যাতে সেগুলো স্বতন্ত্রভাবে পক্ষপাতহীন কাজ করে যেতে পারে। আরএসএস এই স্বতন্ত্রতা শেষ করে দিয়েছে। রাহুল বলেন, একে গণতন্ত্রের অবক্ষয় বললে ভুল হবে। ভারতে গণতন্ত্রের শ্বাস রোধ করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মধ্যপ্রদেশের সাবেক কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের উদাহরণ টেনে রাহুল বলেন, ‘সরকারের পতনের আগে উনি বলেছিলেন, আমলারা সব আরএসএসের অনুগামী। কেউ তাঁর কথা শোনেন না। এটাই দুই আমলের পার্থক্য।’
রাহুলের এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেন, ‘রাহুলের মন্তব্য শুনে হাসি পাচ্ছে। জরুরি অবস্থার সময় সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। বিধায়ক, সাংসদদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রায় সব দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছিল।’
জাভড়েকর বলেন, আরএসএসকে জানতে ও বুঝতে রাহুলের বহু সময় লাগবে। পৃথিবীতে দেশপ্রেমের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরএসএস।
এই আলাপচারিতায় রাহুল বলেন, ‘আমিই প্রথম বলেছি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাংগঠনিক নির্বাচন হওয়া জরুরি। তবে আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে একমাত্র কংগ্রেসকেই এই প্রশ্ন করা হয়। বিজেপি, বিএসপি বা সমাজবাদী পার্টির মতো দলকে এই প্রশ্ন করা হয় না। তাদের দলের গণতান্ত্রিকতা নিয়ে কথা ওঠে না।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময় এ দেশের মূল চালিকা শক্তি হলো আরএসএস, বিজেপি ও ক্রোনি ক্যাপিটালের (স্বজনতোষী) মেলবন্ধন, যার প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল গুজরাটে এবং যার উদ্ভাবক নরেন্দ্র মোদি।