তীব্র দাবদাহে নাকাল ভারত ও পাকিস্তানের বহু মানুষ। ভারতে বিশেষ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। দিল্লির তাপমাত্রা উঠেছে ৪৭ ডিগ্রি পর্যন্ত। এমনকি জম্মুর মতো শহরেও ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানেও চলছে তীব্র দাবদাহ। দেশটির সিন্ধু প্রদেশের জ্যাকোবাবাদে তাপমাত্রা ঠেকেছে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তীব্র দাবদাহে দুই দেশেই মানুষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। খবর এনডিটিভি ও জিও নিউজের।
ভারতের মরুরাজ্য হিসেবে খ্যাত রাজস্থানের বেশ কিছু জেলায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে। রাজ্যটির ধোলপুর জেলাতে গতকাল শনিবার ৪৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। একই দিন দিল্লির মুঙ্গেশপুর ৪৭ দশমিক ২ ও নাজাগড়ের তাপমাত্রা ছিল ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভারতের আবহাওয়া সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল ভারতের রাজধানী শহর দিল্লির প্রতিটি আবহাওয়া দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দাবদাহের কথা জানানো হয়েছে।
দেশটির আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আজ রোববার তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তাই মানুষকে সতর্ক করতে তাঁরা ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করেছে। চলতি গ্রীষ্মকালে দিল্লিতে পঞ্চমবারের মতো দাবদাহ চলছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় চার ধরনের সতর্কতা জারি করে থাকে। এগুলো হলো সবুজ (কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই), হলুদ (পরিস্থিতি নজরে রেখে হালনাগাদ থাকা), কমলা (প্রস্তুত থাকা) ও লাল সংকেত (পদক্ষেপ নিতে হবে)।
গত এপ্রিলে ১৯৫১ সালের পর দ্বিতীয় উষ্ণতম এপ্রিল দেখেছে দিল্লি। এপ্রিলে দিল্লির গড় তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর কর্মকর্তারা বলছেন, পানি শোধনাগারগুলোর উৎপাদন ৮৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দিল্লির জল বোর্ডের (পানিবিষয়ক বোর্ড) কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে তাঁরা পানি রেশন দেওয়া শুরু করেছেন।
এদিকে রাজস্থানের ২৩ শহরে গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। আজ রাজ্যের চারটি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। রাজস্থানের আরও ১২টি শহরে জারি করা হয়েছে অরেঞ্জ অ্যালার্ট। ভারতের মধ্যে এখন রাজস্থানের মানুষ তীব্র দাবদাহে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন।
সর্বোচ্চ ৪৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নিয়ে হরিয়ানা ও গুরুগাঁও ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান। এ ছাড়া অনেক শহরে তাপমাত্রা ৪৪ থেকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার যৌথ রাজধানী হিসেবে পরিচিত চণ্ডীগড় শহরে তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। পাঞ্জাবের ভাতিন্ডায় তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অমৃতসর থেকে শুরু করে অন্য শহরগুলোতে ৪৪ থেকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা ছিল।
জম্মু-কাশ্মীরের জম্মু শহরে এই মৌসুমের উষ্ণতম দিন রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল। শহরটির তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জম্মু ও কাশ্মীরের অনেক জায়গায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তৈরি হয়েছে দাবদাহ। অথচ চলতি মৌসুমে জম্মু শহরের গড় তাপমাত্রা ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জম্মু ও কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরের তাপমাত্রাও অনেকটা বেড়েছে। গতকাল ৩১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শহরটিতে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এমন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, উপত্যকার বিভিন্ন অংশে এরই মধ্যে একটি দাবদাহ শুরু হয়েছে।
পাকিস্তানজুড়ে গরমজনিত বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ। বিশেষ করে সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশে মারাত্মক দাবদাহ শুরু হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, শনিবার সিন্ধুর জ্যাকোবাবাদের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রদেশটির অন্যান্য স্থানের পরিস্থিতিও একই। প্রদেশটির বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘায়িত খরা ও নিরাপদ পানীয়র সংকটে নিরুপায় হয়ে গরম থেকে বাঁচতে দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, সিন্ধু প্রদেশের তিনটি শহরে গতকালও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি ছিল। এদিন জ্যাকোবাবাদে তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া প্রদেশের নবাবশাহ শহরে ৫০ দশমিক ৫ ও মহেঞ্জোদারো শহরে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে প্রাদেশিক রাজধানী করাচিতে গতকাল ছিল বছরের দ্বিতীয় উষ্ণতম দিন। এদিন করাচির তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।
এর আগে দেশটির আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ১২ থেকে ১৫ মে দাবদাহ আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেশির ভাগ অংশে দাবদাহ চলছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে সতর্ক করে বলা হয়, দাবদাহের কারণে শিশু ও প্রবীণেরা সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়বেন।
পাঞ্জাবের অনেক শহরে দিনের বেলার তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এমন দাবদাহের মধ্যে লাহোরের অনেক মানুষকে ঘরের বাইরে থাকতে হয়। পানিস্বল্পতার কারণে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দাবদাহের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া অনেককে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে। ইসলামাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ সতর্ক করেছে, দেশের বিভিন্ন অংশে উচ্চ তাপমাত্রায় হৃদ্রোগ ও পানিবাহিত রোগীর ঝুঁকি বাড়তে শুরু করেছে।