ভারতের ওষুধ তৈরি সংস্থা বায়োটেকের তৈরি করোনার টিকা ‘কো-ভ্যাক্সিন’–এর চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল পশ্চিমবঙ্গে শুরু হচ্ছে কাল বুধবার থেকে। আর এ ট্রায়ালে এই রাজ্যে প্রথম টিকা নেবেন কলকাতার সাবেক মেয়র ও বর্তমান প্রশাসক এবং পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কাল বিকেল চারটায় কলকাতার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্ট্রিক ডিজিজে (নাইসেড) ফিরহাদ হাকিম এ টিকা নেবেন।
ফিরহাদ হাকিমের কাছে নাইসেড থেকে চূড়ান্ত পর্বের টিকা গ্রহণের প্রস্তাব গেলে তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন। মেয়র বলেন, ‘এ টিকা নিয়ে যদি মানুষের সেবা করতে পারি, তার চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। আমার জীবন দিয়েও যদি রাজ্যের মানুষকে বাঁচাতে পারি, তার থেকে গর্বের কিছু নেই আমার কাছে।’
বিভিন্ন শহরে কো-ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল শুরুর আগে ওই রাজ্যের রাজধানী শহরের মেয়রকে আহ্বান জানানো হয় ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করার জন্য। অনেক মেয়র তাঁদের শরীরে অন্যান্য রোগ থাকায় তাঁরা এই ট্রায়ালে অংশ নিতে সম্মত হননি। তবে কলকাতার বর্তমান পৌর প্রশাসক এক বাক্যে রাজি হয়ে যান। চিকিৎসকেরা তাঁর শরীর পরীক্ষা করে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সুস্থ। তাঁর হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি ইত্যাদি ভালো আছে। পেটে সামান্য অসুবিধা থাকলেও তাতে কোনো অসুবিধার কারণ নেই।
গত বুধবার এক হাজার কো-ভ্যাক্সিন এসেছে কলকাতার নাইসেডে। রাখা হয়েছে মাইনাস ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। নাইসেড কাল থেকে শুরু করবে এই টিকা দেওয়ার কার্যক্রম। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কো-ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল চলবে কলকাতার নাইসেড এবং স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। এক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে এই কো-ভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ দেওয়া হবে ২৮ দিনের ব্যবধানে।
নাইসেডের কর্মকর্তা শান্তা দত্ত এর আগে জানিয়েছেন, অন্ধ্র প্রদেশের হায়দরাবাদ থেকে ভারত বায়োটেকের তৈরি এই কো-ভ্যাক্সিন এক হাজার স্বেচ্ছাসেবককে দেওয়া হবে।
শান্তা দত্ত ওই দিন আরও বলেছেন, দেশের ২৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে প্রথম দেওয়া হবে এই টিকা। আর এ ট্রায়াল চলবে দেশের ২৪টি সংস্থায়।
নাইসেডের কর্মকর্তা বলেছেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য প্রথমে আমাদের পক্ষ থেকে একটি ফোন নম্বর দেওয়া হবে। যাঁরা যোগাযোগ করবেন, তাঁদের মধ্য থেকে বাছাই করা হবে স্বেচ্ছাসেবকদের। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা হবে। কেউ আগে করোনায় আক্রান্ত হলে সে স্বেচ্ছাসেবক হতে পারবে না। স্বেচ্ছাসেবক হতে পারবেন না অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও। তবে ডায়াবেটিস, রক্তচাপের মতো মানুষের তা নিয়ন্ত্রণে থাকলে তাঁদের স্বেচ্ছাসেবক হতে বাঁধা থাকবে না। একবার স্বেচ্ছাসেবক হলে তাঁকে এক বছরের জন্য তাঁর ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে না। টিকা নেওয়ার পর তাঁদের রাখা হবে কড়া নজরে। ফলে, এই টিকা নেওয়ার পর যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সবাইকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় এক বছর থাকতে হবে।’
বায়োটেক এ টিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চ বা আইসিএমআর এবং পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভায়রোলজির (এনআইভি) যৌথ গবেষণার মাধ্যমে; যদিও এ টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)।