নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) পক্ষ এবং বিপক্ষ—দুই গ্রুপের একটি ছোট্ট সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ভারতের দিল্লিতে। এরপর মুহূর্তে সেটি ছড়িয়ে পড়ে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় এবং তা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেয়।
এই দাঙ্গা চলে অবাধে। পুলিশ মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিল। মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা চালানো হয় বাড়ি, দোকানপাটেও। কিছু কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে, হামলায় অংশ নিয়েছে পুলিশও। সাংবাদিকেরা এসব ঘটনার খবর সংগ্রহ করছিলেন। কিছু জায়গায় অগ্নিসংযোগকারীরা তাঁদের থামিয়ে দিয়েছে। ধর্ম বিবেচনায় নিয়ে সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। এসব ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে নানা মাধ্যমে। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা এক মুসলমানকে পেটাচ্ছে, জাতীয় সংগীত গাইতে বাধ্য করছে। ফলে যেসব এলাকায় হিন্দু-মুসলিমরা মিলেমিশে বসবাস করছিল, সেই সব এলাকা থেকে সরে যাচ্ছেন মুসলমানরা।
তিন দিন ধরে চলছে এই অবস্থা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ নিয়ে মুখ খুললেন। গতকাল বুধবার তিনি একটি টুইট বার্তা দিয়ে মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের প্রতি কোনো ধরনের সহমর্মিতা জানাননি তিনি। যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারও সমালোচিত হয়েছে। তবে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। কারণ, তারা ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ পুলিশ। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় যখন হামলার ঘটনা ঘটছিল, তখন এই হামলাকারীদের একধরনের দায়মুক্তি দিয়েছিল পুলিশ।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির এই সহিংস পরিস্থিতির সঙ্গে ভারতের দুটি বড় দাঙ্গার তুলনা করা হচ্ছে। এর একটি হলো দিল্লিতে শিখবিরোধী দাঙ্গা। ১৯৮৪ সালে এক শিখ দেহরক্ষী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করে। এরপর দাঙ্গায় প্রায় তিন হাজার শিখ ধর্মাবলম্বী মারা পড়েছিল। আরেকটি হলো গুজরাট দাঙ্গা। ২০০২ সালে এই দাঙ্গায় মারা পড়েছিল প্রায় এক হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই মুসলমান। মোদি তখন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এই দুটি দাঙ্গাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা এসব কুকর্মে সহযোগিতা করেছে।
দিল্লির এই পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আশুতোষ ভার্শনির সঙ্গে। ভারতের ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন তিনি। তিনি বলেন, দিল্লির নতুন এই দাঙ্গার সূত্রপাত ১৯৮৪ এবং ২০০২ সালের দাঙ্গার মতো করে।
অধ্যাপক আশুতোষ ভার্শনির মতে, কোনো দাঙ্গা থামাতে পুলিশ যখন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে না, তখনই ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্য দিয়ে তাণ্ডব বাড়ে এবং অপরাধীদের সাহায্য করার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিন দিন ধরে দিল্লির পুলিশের মধ্যে এমন প্রবণতা এবং উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে।
আশুতোষ বলেন, গুজরাট কিংবা ১৯৮৪ সালে দিল্লিতে যে মাত্রায় দাঙ্গায় হয়েছিল, সেই মাত্রা এখনো স্পর্শ করেনি দিল্লির চলতি দাঙ্গা। এই দাঙ্গা যাতে থেমে যায়, সেই দিকেই নজর দেওয়া উচিত।