গরিবের টিকায় ধনীর টান

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ নামে উৎপাদন করছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট
ছবি: রয়টার্স

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি ডোজ টিকা নিচ্ছে যুক্তরাজ্য। দেশটির সরকার গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে বলা হয় ‘বৈশ্বিক টিকা’। কারণ, এই টিকা দামে তুলনামূলক সস্তা। এই টিকা গণহারে উৎপাদন করা যায়। সাধারণ ফ্রিজের তাপমাত্রায় এই টিকা সংরক্ষণযোগ্য। এই টিকার দুটি ডোজ নিতে হয়।

দরিদ্র দেশগুলোর জন্য উৎপাদিত কম দামের টিকা পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর সংগ্রহের তৎপরতা নিয়ে বিশ্বে আগে থেকেই উদ্বেগ আছে। ভারতের সেরাম থেকে যুক্তরাজ্যের টিকা নেওয়ার পদক্ষেপটি পুরোনো উদ্বেগকেই সামনে নিয়ে আসছে।

তবে যুক্তরাজ্য সরকারের ভাষ্য, সেরাম তাদের আশ্বস্ত করেছে। তারা বলেছে, যুক্তরাজ্যকে টিকা সরবরাহ করা হলে তা দরিদ্র দেশগুলোর প্রতি করা অঙ্গীকারে কোনো প্রভাব পড়বে না। এই আশ্বাসের ধারাবাহিকতায় তারা সেরামের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

পরিমাণের দিক দিয়ে সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা গণহারে উৎপাদন করছে ভারতের পুনেভিত্তিক সেরাম ইনস্টিটিউট। ‘কোভিশিল্ড’ নামে এই টিকা উৎপাদন করছে সেরাম।

সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর বাংলাদেশ, ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো নির্ভর করছে। কিন্তু এই টিকার ব্যাপারে পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর দিক থেকে চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে।

যুক্তরাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, যুক্তরাজ্য ১০০ মিলিয়ন ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্রয়াদেশ দিয়েছে। তার মধ্যে ১০ মিলিয়ন ডোজ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসবে।

রয়টার্স গত মাসেই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়া নিরীক্ষণ করছে। ভারতের সেরাম থেকে যুক্তরাজ্যে টিকা আনার পথ উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে এই নিরীক্ষণের কাজ করা হয়।

বৈশ্বিক কোভ্যাক্স উদ্যোগেও টিকা সরবরাহ করছে সেরাম। ‘কোভ্যাক্স’ মানে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি। এই উদ্যোগের যৌথ নেতৃত্বে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), স্বল্পমূল্যে টিকা দেওয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্যাভি, সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংস্থা (সিইপিআই)। করোনার টিকার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা এই উদ্যোগের লক্ষ্য।

টিকাদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে এগিয়ে রয়েছে। তারা ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেরামের টিকা উৎপাদন নিরীক্ষণ করছে। গত সোমবার রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

সেরামে উৎপাদিত টিকা কানাডাও নিতে চায়। দেশটিকে টিকা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেরাম।

সেরাম থেকে করোনার টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা বিদেশি সরকারগুলোকে গত মাসে ধৈর্য ধরতে বলে প্রতিষ্ঠানটি।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। পরে ভারত, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ এই টিকার অনুমোদন দেয়। তারপর তার ব্যবহার শুরু করে।