ভারতের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় এত দিন বাম দল ও কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল দেখা গেছে। এক নির্বাচনে কংগ্রেস জয় পেলে, পরের নির্বাচন জিতে বাম দল ক্ষমতায় গেছে। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সেই রীতি ভেঙেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ান। তাঁর হাত ধরে লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) টানা দুই মেয়াদে সরকার গড়তে যাচ্ছে এ রাজ্যে। ১৯৮২ সালের পর কেরালায় একই দলের পরপর দুই মেয়াদে নির্বাচনে জয়ের ঘটনা এটাই প্রথম।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনে কেরালা বিধানসভার ১৪০ আসনের মধ্যে বাম শিবির ৯৬টি আসনে জয় পেয়েছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য এ রাজ্যে ৭১টি আসনে জয় পেলেই চলত। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) জয় পেয়েছে ৪৩টি আসনে। বাকি একটি আসনে জয় পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। কেরালায় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি ভোটের খাতায় কার্যত শূন্য পেয়েছে। একটি আসনেও জিততে পারেনি দলটি।
২০১৬ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রবীণ বামপন্থী নেতা বিজয়ান। তিনি কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সিস্ট) পলিটব্যুরোর সদস্য। দলটি সংক্ষেপে সিপিআই–এম নামে পরিচিত। গত বছর করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় কেরালার বামপন্থী সরকার দারুণ সাফল্য দেখিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে এ সফলতা ‘কেরালা মডেল’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বাম সরকার এর সুফল পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বাম নেতৃত্বাধীন সরকারের সফলতা ভোটের লড়াইয়ে এলডিএফ জোটকে এগিয়ে রেখেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কেরালার ওয়েনাদ আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে জিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রাজ্যটিতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ। পরপর দুই মেয়াদে কেরালা শাসনের রেকর্ডও কংগ্রেসের দখলে। আশির দশকে দলটির নেতা কে করুণাকরন পরপর দুই মেয়াদে কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে কেরালায় শাসনক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই ছিল। অন্যদিকে বিজেপি চেষ্টা করেছিল বাম–কংগ্রেস অধ্যুষিত উপকূলীয় এ রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে। হিন্দু ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করেছিল দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস–বিজেপি নয়, রেকর্ড গড়ে শেষ হাসি হাসছে বামরা।