ভারতের কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল অনুমোদন করল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই আইন প্রত্যাহারের সব প্রক্রিয়া সেরে ফেলা হবে। বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের খবর জানান।
বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দেড় বছর ধরে কৃষক সমাজ আন্দোলন চালাচ্ছিল। সেই আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী মোদি ১৯ নভেম্বর তিন আইনই প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। জাতির প্রতি ভাষণে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পাশাপাশি তিনি কৃষকদের ধরনা মঞ্চ ছেড়ে ঘরে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সেই আবেদনে আন্দোলনকারী কৃষকেরা অবশ্য এখনো সাড়া দেননি। তাঁরা বলেছেন, আইন প্রত্যাহার তাঁদের আংশিক জয়। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তাঁরা বলেছেন, শুধু আইন রদ করলেই হবে না, কৃষকেরা যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পান, সেই বিষয়টিও আইন করে নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য তাঁরা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি বৈধতার দাবি জানিয়েছেন।
এমএসপি নিয়ে আইন করতে সরকার অবশ্য এখনো রাজি নয়। সরকারের বক্তব্য, প্রতিবছর এমএসপির দর বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু আইনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা কঠিন। কৃষকদের সঙ্গে সরকারের যে ১১ দফা আলোচনা হয়েছিল, সেখানেও এই কথা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, সরকার এমএসপি বিষয়ে বছর বছর নির্দেশিকা জারি করতে পারে, কিন্তু আইনি নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে সরকার সারা দেশের সর্বত্র কৃষকদের ওই দাম দিতে বাধ্য থাকবে। অর্থনীতির পক্ষে তা ভালো নয়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দেউলিয়া হয়ে যাবে। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য শ্বেতকারি সংগঠনের নেতা অনিল ঘানোয়াতের অভিমতও তা-ই। সুপ্রিম কোর্টকে তিনি তাঁদের রিপোর্ট প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
আগামী সোমবার শুরু হচ্ছে ভারতের সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। অধিবেশনে সরকার আরও একটি বিতর্কিত বিল আনতে চলেছে—রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের বেসরকারীকরণ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ আগেই জানিয়েছেন, সরকার চলতি অর্থবছরে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে বেসরকারি খাতে তুলে দিতে চায়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মী সংগঠন। তারা ‘ব্যাংক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ হাঁক দিয়ে দিল্লি অভিযান শুরু করেছে। ৩০ নভেম্বর সংগঠনের নেতারা দিল্লি পৌঁছাবেন। তাঁরা এই আন্দোলনে কৃষক সংগঠনের সমর্থন চেয়ে সংযুক্ত কিষান মোর্চাকে চিঠি দিয়েছেন। ব্যাংক সংগঠনের দাবি, এই বিল পাস করিয়ে সরকার ভবিষ্যতে সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে বেসরকারি হাতে তুলে দেবে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দল এই বিলের বিরোধিতা করেছে।