ভারতের উত্তর প্রদেশের লাখিমপুর খেরিতে কৃষকদের বিক্ষোভে গাড়ি উঠিয়ে আটজনকে হত্যার ঘটনায় দেশটির রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রর দিকে। ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন বলে অভিযোগ কৃষকদের। প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে অজয় মিশ্রকে বরখাস্ত এবং তাঁর ছেলেকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আশিসের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন ভারতীয় কৃষক ইউনিয়নের নেতা রাকেশ তিকাইত। এদিকে নিহত কৃষকদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে বুধবার উত্তর প্রদেশে পৌঁছেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। দলীয় নেতাদের পাশাপাশি দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্রর বাড়ি উত্তর প্রদেশের লাখিমপুর খেরিতে। গত রোববার সেখানে প্রতিমন্ত্রী এবং রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্যর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন কৃষকেরা। এ সময় মন্ত্রীর গাড়িবহরের একটি গাড়ি বিক্ষোভরত কৃষকদের ওপর উঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় চার কৃষকসহ আটজন নিহত হন। কৃষকেরা বলছেন, ওই সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন প্রতিমন্ত্রীপুত্র আশিস মিশ্র।
ওই ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সমবেদনা জানাতে পরদিন সোমবার সকালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী উত্তর প্রদেশে গেলে সীতাপুরে একটি গেস্টহাউসে তাঁকে আটকে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে মামলা দায়েরের কথা জানিয়েছিলেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। তবে দুই দিন পর বুধবার বিকালে তাঁকে সেখান থেকে বেরোনোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাহুল গান্ধী সীতাপুরে গিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে লাখিমপুর খেরিতে যাবেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এদিকে বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে লাখিমপুর খেরিতে পৌঁছেছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ফোনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষকনেতা রাকেশ তিকাইত আগের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা মন্ত্রীর ছেলেকে গ্রেপ্তারে এক সপ্তাহের সময়সীমা দিয়েছি। নিহত কৃষকদের স্মরণে ভোগের দিনে আমরা আবার একত্র হব। এই সময়সীমার মধ্যে মন্ত্রীপুত্র গ্রেপ্তার না হলে সেখানে আমরা এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে অনেকেই মন্ত্রীর ছেলেকে দেখেছেন। এ ঘটনার অনেক ভিডিও রয়েছে। ইন্টারনেট সমস্যর সমাধান হলে সেগুলো শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
গাড়িচাপার ঘটনার সময় ছেলে আশিস মিশ্র ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র। এনডিটিভিকে তিনি বলেছেন, যে গাড়িটি বিক্ষোভকারীদের চাপা দিয়েছে, সেটি তাঁদেরই মালিকানাধীন। তবে ঘটনার সময় আশিস ওই গাড়িতে ছিলেন না। তিনি বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্য একটি জায়গায় সভা-সমাবেশ করছিলেন। তাঁর ছবি ও ভিডিওসহ একাধিক প্রমাণ রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে অজয় মিশ্রের পদত্যাগের দাবি করেছে বিরোধী দলগুলো। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি কেন পদত্যাগ করব? আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। যারা জড়িত আছে, যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
বুধববার সকালে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহার সঙ্গে দেখা করেছেন অজয় কুমার মিশ্র। তবে ওই বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র যা–ই বলেন না কেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার একটি ভিডিও বলছে ভিন্ন কথা। বলা হচ্ছে, রোববারের গাড়িচাপার ঘটনার পরপরই ভিডিওটি ধারণ করা হয়। তবে ভিডিওটির সত্যতা নিজস্বভাবে যাচাই করতে পারেনি এনডিটিভি।
ভিডিওতে রক্তাক্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে কথা বলতে দেখা যায়। ওই ব্যক্তি বিক্ষোভকারীদের চাপা দেওয়া গাড়িটির পেছনের গাড়িতে ছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশ কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে বলেন, চাপা দেওয়া গাড়িটিতে আশিস মিশ্র ও তাঁর সহযোগীরা ছিলেন।
এর আগে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তায় থাকা বিক্ষোভকারীদের ওপর দিয়ে একটি গাড়ি চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ওই ভিডিওটি সংযুক্ত করে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আপনার একজন মন্ত্রীর ছেলে কৃষকদের পিষে দিয়ে যাচ্ছেন। আপনি ভিডিওটি দেখেন, আর দেশবাসীকে জবাব দেন, কেন ওই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হলো না, কেন তাঁর ছেলেকে এখনো গ্রেপ্তার করা হলো না? আপনি আমাকে কোনো মামলা ছাড়াই এভাবে আটক করে রেখেছেন। আমি জানতে চাই, ওই লোকটি (প্রতিমন্ত্রীপুত্র) কেন এখনো মুক্ত রয়েছেন?’