অবশেষে ন্যায়বিচার পেল কাঠুয়ায় আট বছরের মেয়েটি। ধর্ষণের মামলায় সাজা ঘোষণা করেছেন পাঠানকোট আদালত। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আট বছরের শিশুকে গণধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তথ্য–প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদেরও শাস্তি দেন আদালত। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
নির্ভয়াকাণ্ডে ভারত উত্তাল হয়েছিল। এরপর কাঠুয়াকাণ্ডেও ভারতবাসী সাড়া দিয়েছিল। গত বছর জানুয়ারি মাসে নিখোঁজ হয় কাশ্মীরের আট বছরেরে ফুটফুটে শিশু। চার দিন ধরে টানা মাদক খাইয়ে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়। চলে লাগাতার ধর্ষণ। এরপরও দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা করে হিন্দু একতা মঞ্চ। অভিযোগপত্র দিতেও বাধা দেওয়া হয়। নির্যাতনের শিকার শিশুর পরিবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে এই মামলা সরিয়ে নেওয়ার জন্য। এরপর রুদ্ধদার মামলা চলতে থাকে পাঠানকোটে। শুনানি শেষ হয় ৩ জুন। গত সোমবার কাঠুয়া মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিকে কাঠুয়া শহরের পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। সরকারের সাবেক এক কর্মকর্তা, চারজন পুলিশ সদস্য, একজন সংখ্যালঘুসহ মোট আটজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, শিশুটিকে দিনের পর দিন ধর্ষণ ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। মেয়েটি গুজ্জার সম্প্রদায়ের সদস্য। গুজ্জারদের ভীতসন্ত্রস্ত করতে বাচ্চাটিকে লক্ষ্য করা হয়।
২০১৬ সালে প্রকাশিত সরকারি অপরাধ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের হারও ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। বিবিসির প্রতিবেদক গীতা পাণ্ডে বলেন, ভারত যৌন নির্যাতনের শিকার অসংখ্য শিশুর ঠিকানা হয়ে উঠছে। তবে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা বলার চল না থাকায় প্রকৃত সংখ্যা অনুমান করা কষ্টসাধ্য।
এ রায়কে ‘সাংবিধানিক শক্তির জয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন শিশুটির পক্ষের আইনজীবী। তিনি বলেন, পুরো দেশ এই মামলায় একসঙ্গে লড়েছে। ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সবাই সুবিচার চেয়েছে। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রমাণের অভাবে অপরাধীরা সর্বনিম্ন সাজা পেয়েছেন।