আগস্ট মাসে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করা হয়। কাশ্মীর সরকার গতকাল মঙ্গলবার লোকসভায় জানিয়েছে, ৫ আগস্ট এই ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে ৭৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংসদে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা উল্লেখ করল।
হিমালয় অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য সংস্থা জানিয়েছে, আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত কাশ্মীরে প্রায় ১০০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষয়ক্ষতির জন্য সংস্থাটি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছে।
এনডিটিভি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিপত্তি সৃষ্টিকারী এবং পাথর ছোড়ার সঙ্গে জড়িত বলে সরকার জানিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে পাথর ছুড়ে মারা রীতিমতো মহামারিতে পরিণত হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকার জম্মু ও কাশ্মীরে পাথর নিক্ষেপের প্রবণতা রোধ করতে বহুদলীয় নীতি গ্রহণ করেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি বলেন, পাথর ছোড়ার ঘটনা কমে গেছে। লোকসভায় লিখিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছরের ৫ আগস্ট থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পাথর ছোড়া এবং আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত ১৯০টি মামলায় ৭৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রেড্ডি বলেন, সরকার পাথর ছোড়া রোধে সফল। বিপত্তি সৃষ্টিকারী, উসকানিদাতা ও আন্দোলনকারী বহু লোককে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে কাশ্মীর উপত্যকায় পাথর ছোড়ার ঘটনার পেছনে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এবং কর্মীদের হাত রয়েছে। দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন মামলায় ১৮ জনকে অভিযুক্ত করেছে।
অন্য প্রশ্নের জবাবে রেড্ডি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন জানিয়েছে, গত ছয় মাসে ১২ হাজার ৯৩৪ জন বিদেশিসহ ৩৪ লাখ ১০ হাজার ২১৯ পর্যটক জম্মু ও কাশ্মীরে সফর করেছেন। এই সময় কাশ্মীর সরকার পর্যটন খাতে ২৫ কোটি ১২ লাখ রুপি আয় করেছে বলে জানানো হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, অনুচ্ছেদের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর প্রাথমিকভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বেড়েছে। চলতি পরীক্ষায় ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী হাজির হয়েছে বলে জানান তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেসিসিআই) বলেছে, এই সময়ে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। সাংবিধানিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হিসেবে ও বিদ্রোহীদের আন্দোলনের ভয়ে বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘায়িত এই অবরোধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নাসির খান বলেন, তাঁদের ধারণা, সেপ্টেম্বরের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষতি কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন রুপি ছাড়িয়ে গেছে।