পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি বিক্রির তথ্য চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। কলকাতা পৌর করপোরেশনের কাছে এ–সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে সিবিআই।
মমতার একক চিত্রপ্রদর্শনী হয়েছিল কলকাতার পৌরসভার অধীনে থাকা কলকাতার টাউন হল মিলনায়তনে। ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে এই প্রদর্শনী চলে ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
গত শুক্রবার টাউন হলের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি চিঠি পাওয়ার পর কলকাতার সল্ট লেকের সিবিআই অফিসে গিয়ে কিছু তথ্য দিয়ে এসেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই প্রদর্শনীতে চড়া দামে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা বেশ কিছু ছবি বিক্রি হয়েছিল। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুসহ কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন শিল্পপতি চড়া মূল্য দিয়ে কিনেছিলেন মমতার আঁকা এসব ছবি। এখন সিবিআই তদন্ত করে জানতে চাইছে, কারা এই ছবি কিনেছিলেন এবং কত মূল্যে তাঁরা কিনেছিলেন। তাঁদের অর্থের উৎস সম্পর্কেও জানতে চায় তারা।
মমতার আঁকা ছবি নিয়ে এর আগে প্রদর্শনী হয়েছিল ২০১১ সালে কলকাতার শেক্সপিয়ার সরণির একটি বেসরকারি স্টুডিওতে। সেখান থেকেও বিক্রি হয়েছিল মমতার ছবি। সেই প্রদর্শনীরও এখন খোঁজখবর নিচ্ছে সিবিআই। স্টুডিওটি এখন বন্ধ রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন ২০১১ সালের ২০ মে। মুখ্যমন্ত্রী এখন এই রাজ্যে শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে পরিচিত নন; তিনি একজন লেখিকা, কবি, গীতিকার, সুরকার, প্রবন্ধকার, ঔপন্যাসিক এবং একজন চিত্রকর হিসেবেও পরিচিত। তাঁর ৪০টির বেশি বই বের হয়েছে। লিখেছেন বাংলা ও ইংরেজিতে। তাঁর বই অনূদিত হয়েছে হিন্দিসহ অন্য ভাষাতেও। আর এই মমতার নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকাও আয় করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
এই ছবি বিক্রি নিয়ে ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তালও হয়েছিল। ওই সময় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, মমতার ছবি বিক্রি হয়েছে নয় কোটি টাকার। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ১ কোটি ৮০ লাখ দিয়ে কিনেছিলেন মমতার আঁকা একটি ছবি। শুধু সারদা নয়, রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুও কিনেছিলেন মমতার ছবি প্রচুর অর্থ দিয়ে। সুদীপ্ত সেন সারদার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার হন। এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে আছেন রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুও। তাঁদের বিরুদ্ধে চলা মামলার এখন তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই ও ইডি।
মমতার এই ছবি বিক্রি নিয়ে তখন রাজনৈতিক মঞ্চও উত্তাল ছিল। যদিও তৃণমূল দাবি করেছিল, দলীয় তহবিল গড়ার জন্য এই ছবি বিক্রি করা হয়েছিল। সেদিন এ কথাও বলা হয়েছিল, মমতার আঁকা ৩০০ ছবি বিক্রি হয়েছিল।
ইতিমধ্যে মমতার আঁকা ছবির এক ক্রেতা ব্যবসায়ী শিবাজি পাঁজাকে দুবার সিবিআই অফিসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শিবাজি পাঁজা ৫০ লাখ রুপি দিয়ে মমতার ছবি কিনেছিলেন। এবার সেই টাকার উৎস কী, তা জানতে জেরা করা হয়েছে শিবাজি পাঁজাকে। যদিও শিবাজি পাঁজা এর সপক্ষে নথি দিয়েছে সিবিআইকে। এখন সেসব নথি খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
সিবিআই শিবাজি পাঁজার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কৌস্তব রায়কেও জেরা করেছে। যদিও কৌস্তব রায় বলেছেন, তিনি ছবি সম্পর্কে জানেন না। তবে ২০১১ সালে শিবাজি পাঁজা ব্যবসায়ে প্রচুর লাভ করায় সেই লাভের অর্থ থেকে কিনেছিলেন ওই ছবি।
সিবিআই দাবি করেছে, শিবাজি পাঁজার সেই ৫০ লাখ টাকা গিয়েছে তৃণমূলের মুখপত্রের ব্যাংক হিসাবে। সিবিআই আরও জানিয়েছে, ছবি বিক্রির অর্থ তৃণমূলের ব্যাংক হিসাবে এবং নগদেও দেওয়া হয়েছে।