কলকাতায় মহান একুশে পালন

কলকাতার রবীন্দ্রভারতী এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে আলপনা আঁকেন
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ রোববার কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সাড়ম্বরে পালন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন স্থানে দিনটি পালিত হয়েছে। স্মরণ করা হয়েছে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের। দিনটিকে সামনে রেখে কলকাতার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস চত্বরের ছাতিমতলায় ভাষা ও চেতনা সমিতি আয়োজন করে ভাষা উৎসবের। উৎসবের উদ্বোধন করেন সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র। এদিন রাত ১২টায় মশাল মিছিল বের হয়। এতে যোগ দেন দেশ-বিদেশের শতাধিক শিল্পী। অনুষ্ঠানে তিনটি নাটকও পরিবেশিত হয়। আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ভাষা চেতনা সমিতি আয়োজিত এই অনুষ্ঠান এবার ২৩ বছরে পা দিয়েছে।

আজ সকালে পার্ক সার্কাস এলাকায় কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন গ্রন্থাগার থেকে বের হয় প্রভাতফেরি। এতে যোগ দেন কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। এরপরই উপহাইকমিশনে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে দিনের সূচনা হয়।

বাংলাদেশের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। বিকেলে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এতে যোগ দেন কলকাতার শিল্পীসহ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা।

কলকাতার ভাষা শহীদ স্মারক সমিতি কলকাতার কার্জন পার্কে অবস্থিত ভাষা উদ্যানের শহীদ স্মারকে সকালে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে দিনটি শুরু করে।

কলকাতার বিড়লা প্ল্যানেটারিয়াম চত্বরে নির্মিত ভাষা শহীদ উদ্যানের শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।

কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের পক্ষ থেকে কলকাতায় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়

বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে দেশপ্রিয় পার্কে আয়োজন করা হয় ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। কলকাতার রবীন্দ্রভারতী এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনটি পালিত হয় সাড়ম্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আলপনা আঁকেন সড়কে। আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, প্রভাতফেরি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা সকালে প্রভাতফেরি বের করেন। শান্তিনিকেতনে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরাও প্রভাতফেরিতে অংশ নেন। এখানের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা। এরপর বাংলাদেশ ভবনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

কলকাতার বেলেঘাটা মোড়, মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ধাঁচে গড়া শহীদ মিনারেও এদিন শ্রদ্ধা জানান ভাষাপ্রেমিকেরা। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামের স্কুল-কলেজেও দিনটি পালিত হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়।

পশ্চিমবঙ্গ-ভারত সীমান্তের বেনাপোল-পেট্রাপোলে দিনটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। এখানে দুই দেশের ভাষাপ্রেমিকেরা আয়োজন করেন একুশের অনুষ্ঠান। পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুরের বালুরঘাট সীমান্তে এবং আলীপুরদুয়ারে দিনটি পালন করা হয়।

ভাষাসৈনিক বরকতের গ্রাম মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামেও দিনটি পালিত হয় সাড়ম্বরে। সকালে অনুষ্ঠিত হয় প্রভাতফেরি। বিকেলে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ত্রিপুরা, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, ছত্রিশগড়সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাংলাভাষী অঞ্চলে দিনটি পালিত হয়।