বাংলা চলচ্চিত্র জগতের স্বর্ণ যুগের নির্মাতা মৃণাল সেনের অবদানকে কলকাতায় স্মরণ করলেন কলকাতার সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকারা। আজ শনিবার বিকেলে কলকাতার গোর্কি সদনে মৃণাল সেনের স্মরণে আয়োজিত স্মরণ সভায় স্মরণ করলেন তাঁরা।
মৃণাল সেন ছিলেন আশির দশকের চলচ্চিত্র অঙ্গনের এক কান্ডারি। তিনি ছাড়া সেই যুগের চলচ্চিত্র অঙ্গনের দিকপাল ছিলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক। তাই তাঁর মৃত্যুতে কলকাতাবাসী হারালেন এক চলচ্চিত্র কারিগরকে। যে কারিগর তৈরি করেছিলেন সেই যুগের সেরা কিছু চলচ্চিত্র।
গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এই বিশ্ববরেণ্য পরিচালক কলকাতার ভবানীপুরের তাঁর নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
আজ এই স্মরণসভায় মৃণাল সেনের একমাত্র পুত্র কুণাল সেন ও পুত্রবধূও ছিলেন। স্মরণ সভায় আজ শনিবার যোগ দেন কলকাতা ছবিপাড়ার শিল্পী কলা কুশলীসহ সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। সবাই মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র অঙ্গনে অবদান রাখার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, বাংলা চলচিত্রের এই মহীরূহকে চিরদিনের জন্য হারাল কলকাতাবাসী। বাংলা চলচ্চিত্র’র এই কারিগরের প্রয়োজন ছিল বড্ড। তাই তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল চলচ্চিত্র অঙ্গনের। এই প্রথিতযশা পরিচালক আর ফিরে আসবেন না বাংলা চলচ্চিত্রকে উপদেশ আর পরামর্শ দিতে। তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মহান কারিগর।
আজ মৃণাল সেনকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার, গৌতম ঘোষ, অঞ্জন দত্ত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সাহিত্যিক দেবেশ রায়, অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় শ্রীলা মজুমদার প্রমুখ । তাঁরা সকলেই মৃণাল সেনকে গভীর ভাবে স্মরণ করে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে তাঁর স্মৃতি চারণ করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু , বাম নেতা রবীন দেবসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা।
আজ বক্তারা বলেন, বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের শেষ মহিরুহের পতন হয়ে গেল। শেষ হয়ে গেল সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল যুগের। তাঁরা মৃণাল সেনের ছবিগুলি সংরক্ষণের দাবি করেন। বক্তারা বলেন, মৃণাল সেন ছিলেন চলচ্চিত্রের একজন মহান শিক্ষক এবং অভিভাবক। সিনেমা বানানোর শেষ কারিগর চলে গেলেন এবার।
এদিন সভার শুরুতে মৃণাল সেনের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়া এদিন মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র নিয়ে গোর্কি সদনে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরে জন্ম মৃণাল সেনের ১৯২৩ সালের ১৪ মে। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে তাঁর ফরিদপুর শহরে।
১৯৪৩ সালে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি চলে আসেন কলকাতায়। তারপর এখানের স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন । বাংলাদেশ ছাড়ার পর সেই তাঁর স্মৃতিবাহী বাংলাদেশে তিনি প্রথম পা রেখেছিলেন দীর্ঘ ৪৭ বছর পর ১৯৯০ সালে। মৃণাল সেনের সহধর্মিণী গীতা সেন প্রয়াত হন গত ২০১৭ সালে।
বহু বিখ্যাত চলচ্চিত্র তৈরির কারিগর ছিলেন মৃণাল সেন। ১৮টি ছবির জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছিলেন ১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। তিনি বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় ছবি নির্মাণ করেছেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘রাতভোর’। নির্মিত হয় ১৯৫৫ সালে। এরপরের চলচ্চিত্র ‘নীল আকাশের নিচে’। তিনি ২৬টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ করেছেন ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র আর চারটি প্রামাণ্য চিত্র। মৃণাল সেনকে নিয়েই কলকাতায় নির্মিত হয়েছে আবার পাঁচটি তথ্য চিত্র।
পেয়েছেন ভারতের বিনোদন জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ (২০০৫) ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী (১৯৮১) পেয়েছিলেন মৃণাল সেন।