পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা এখন করোনা সংক্রমণের শীর্ষে চলে এসেছে। রাজ্যের অনেক এলাকায় করোনার সংক্রমণ কমলেও কলকাতা শহরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে রাজ্য সরকার তিনটি অঞ্চলে ভাগ করেছে। লাল, কমলা ও সবুজ। সবুজ জোন হলো করোনামুক্ত এলাকা। লাল জোন করোনার অত্যন্ত সংক্রমিত এলাকা। কমলা জোন হলো যেসব এলাকায় ছিটেফোঁটা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে লাল জোনে রয়েছে কলকাতাসহ রাজ্যের ৪টি জেলা। বাকি তিনটি জেলা হলো হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর।
কমলা জোনে রাখা হয়েছে ১১টি জেলা। সবুজ জোনে রাখা হয়েছে ৮টি জেলা।
কমলা জোনে আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, কালিম্পং, দার্জিলিং, নদীয়া, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ ও মালদহ।
সবুজ জোনে রয়েছে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বলেছেন, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে ২৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছে ১১৯ জন।
সব মিলিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গে মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ এবং আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪১।
রাজীব সিনহা এ কথাও জানান, আক্রান্ত ২৮ জনের ৭৫ শতাংশই হলো কলকাতার। বাকি ২৫ শতাংশ হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলির।
রাজীব সিনহা আরও বলেছেন, এই রাজ্যের ২ হাজার ৪১৯টি শিল্পকারখানাকে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকার ঘোষিত পশ্চিমবঙ্গের লাল জোনের ৩৪৮টি এলাকাকে কনটেনমেন্ট এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতার রয়েছে ২২৭টি, হাওড়ার রয়েছে ৫৬টি, উত্তর ২৪ পরগনার রয়েছে ৫৭টি ও পূর্ব মেদিনীপুরের রয়েছে ৮টি কনটেনমেন্ট জোন। এই ৩৪৮টি কনটেনমেন্ট জোনে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। সেখানে চলছে কড়া লকডাউন।
ফের লড়াই শুরু
২৩ এপ্রিল করোনা ইস্যু নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে পত্রযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মমতা ৫ পাতার এক চিঠি দিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন। ওই দিন রাতে রাজ্যপালও ৫ পাতার এক চিঠি দিয়ে মমতাকে একইভাবে কাঠগড়ায় তোলেন।
সেই চিঠির রেশ এখনো কাটেনি। এরপর হয়েছে দুজনের ৪ পাতার চিঠির লড়াই।
গতকাল রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এক টুইটবার্তায় মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে ফের লেখেন, দেশ থেকে রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছেন মমতা। এই প্রচেষ্টা অসাংবিধানিক। মুখ্যমন্ত্রী বরং ভাষণ না দিয়ে মানুষের কষ্ট লাঘবের শামিল হোক।
এই টুইটবার্তার জবাব দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাল্টা লিখেছেন, 'রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের মন্ত্রীদের বারবার আক্রমণ করে আপনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, আপনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা আছে। গোটা দেশ যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন আপনি রাজ্যপাল হিসেবে আপনার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিজেপির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত থাকছেন। বিজেপির মতাদর্শ মাথায় রেখে আপনি পরোক্ষভাবে রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতা ও বিভেদ ছড়ানোর উসকানি দিচ্ছেন।'
রাজ্যপাল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখেন, 'আপনি এবং আপনার জায়গায় থাকা অন্যদের বরং মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানো উচিত, যাতে পাল্টাতিনি সংবিধান মেনে চলেন। এবং দায় না এড়িয়ে করোনা মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেন। আর এর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে রাজ্যপাল সব সময় তৈরি।'
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্যে ত্রাণ, রেশন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ তোলেন রাজ্যে করোনার মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও। দিলীপ ঘোষ বলেছেন, রাজ্যের মানুষকে পাঁচ কেজি চাল ও গম এবং এক কেজি করে ডাল দেওয়ার কথা থাকলে তা পাচ্ছে না মানুষ। সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা লুটপাট করছেন। এমনকি রাজ্যে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা লুকিয়ে রাখছে। রাজ্যে করোনায় ৫৭ জনের মৃত্যু হলেও আজ পর্যন্ত বলা হচ্ছে ২০ জনের মৃত্যুর কথা।
গতকাল এক করোনামুক্তি যজ্ঞের আয়োজন করা হয় কলকাতায়। কলকাতার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি রবি পাল এই যজ্ঞের আয়োজন করেন। যঞ্জের অগ্নিতে আহুতি দেওয়া হয় করোনাভাইরাসের প্রতিরূপকে। প্রার্থনা করা হয়, বিশ্ব থেকে করোনা নির্মূল ও বিশ্বশান্তির। কলকাতার মুচিবাজার এলাকার জহরীলাল দত্ত লেনে এই যজ্ঞের আয়োজন করা হয়।