কংগ্রেসে পরিবর্তনের পথে সোনিয়া

সোনিয়া গান্ধী
ফাইল ছবি

সাংগঠনিক পরিবর্তন যে অবশ্যম্ভাবী, ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী গতকাল শুক্রবার তা স্পষ্ট করে দিলেন। রাজস্থানের উদয়পুরে তিন দিনব্যাপী কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের ‘চিন্তন শিবির’–এর প্রথম দিনেই তিনি বলেন, পরিবর্তন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সেই পরিবর্তন শুধু সাংগঠনিক বদলেই নয়, বদলাতে হবে কাজের ধারাও। তিনি বলেন, ‘দল আমাদের অনেক দিয়েছে। এবার সময় এসেছে তার প্রতিদানের।’

দলের ইতিকর্তব্য স্থির করাই এ ধরনের ‘চিন্তন শিবির’–এর মূল উদ্দেশ্য। খোলামেলা আলোচনার মধ্য দিয়ে এ ধরনের সম্মেলন থেকেই দলের পরবর্তী কৌশল স্থির হয়। ১৯৯৮ সালে মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারিতে প্রথম শিবিরে কংগ্রেস জোট রাজনীতির সাময়িক প্রাসঙ্গিকতা মেনে নিয়েছিল। ২০০৩ সালে হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলায় জাতীয় স্তরে ধর্মনিরপেক্ষ জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ হয়েছিল। সেই সম্মেলনের পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে জিতে কংগ্রেস জোট টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকে। ২০১৩ সালে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের ‘চিন্তন শিবির’ অবশ্য একেবারেই ফলদায়ী হয়নি। পরের বছর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি শুধু ক্ষমতাই লাভ করে না, কংগ্রেসকেও নামিয়ে আনে তলানিতে। এবার উদয়পুরে শুরু গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা।

শিবিরের প্রথম দিনে সাংগঠনিক বদলের ইঙ্গিত স্বীকার করে সোনিয়া আক্রমণের নিশানাও ঠিক করে দিলেন। বিজেপিকে তুলাধোনা করে প্রারম্ভিক ভাষণে বলেন, ‘সরকারকে সবচেয়ে কম, প্রশাসনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার যে কথা (ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স, মিনিমাম গভর্নমেন্ট) প্রধানমন্ত্রী বলে আসছেন, তার অর্থ এখন স্পষ্ট এবং যন্ত্রণাময়। ওই স্লোগানের অর্থ, মানুষকে সর্বদা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রাখো। প্রবলভাবে মেরুকরণের রাজনীতি গ্রহণ করো। সংখ্যালঘুদের জীবন অত্যাচারে অতিষ্ঠ করে তোলো।’

সোনিয়া বলেন, বছরের পর বছর ধরে বহুত্ববাদী যে সমাজ এ দেশটাকে ধরে রেখেছে, তাকে নষ্ট করাই ওই স্লোগানের লক্ষ্য। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বদলে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপাদাপি প্রতিষ্ঠা তার উদ্দেশ্য।

সোনিয়া দলীয় নেতাদের বলেন, মুক্তমনে খোলামেলা আলোচনার মধ্য দিয়ে দলের দিশা স্থির করতে হবে। এই শিবির থেকেই কংগ্রেস ২০২৪ সালের রণকৌশল ঠিক করবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আগামী দিনে দলে কম বয়সীদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ঠিক হতে পারে ‘এক পরিবার এক টিকিট’ প্রথা। এ নিয়ম চালু হলে এক পরিবারের একজনকেই ভোটে প্রার্থী করা হবে। তবে পরিবারের দ্বিতীয় সদস্য পাঁচ বছর সক্রিয়ভাবে দলীয় রাজনীতিতে থাকলে ব্যতিক্রম বলে গণ্য হবে। গান্ধী পরিবারকে অবশ্য এ ব্যবস্থার বাইরে রাখা হবে। সক্রিয় রাজনীতিতে থাকার একটা সর্বোচ্চ বয়সও বেঁধে দেওয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি বিজেপিতে যে বয়স ৭৫–এ বেঁধে দিয়েছিলেন। রাজ্যসভার ক্ষেত্রেও ঠিক করা হতে পারে, কোনো নেতাকে তিন অথবা চারবারের পর আর মনোনীত করা হবে না। উদ্দেশ্য, সংগঠন ও সংসদীয় রাজনীতিতে নতুন রক্তের সঞ্চালন। সে জন্য একটা প্রস্তাব, প্রতিটি কমিটির ৫০ শতাংশ সদস্যের বয়স হতে হবে ৫০ বছরের কম।

বিজেপির মোকাবিলায় জোট রাজনীতির চরিত্র কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক প্রস্তাবে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সবাইকে নিয়ে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও তার বাস্তবায়নে দল কোন কৌশল গ্রহণ করে, তা নিয়েও আগ্রহ দানা বাঁধছে।