ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেছেন, জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ভবিষ্যতের দলিল হয়ে উঠতে পারে। গতকাল রোববার ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে বর্ষীয়ান সাংবাদিক মৃণাল তালুকদারের লেখা ‘পোস্ট কলোনিয়াল আসাম (১৯৪৭-২০১৯)’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে তিনি এ কথা বলেন।
রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘এর আগে এই রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা নিয়ে শুধু অনুমানের ভিত্তির ওপর একটা মত চলে আসছিল, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি, আতঙ্ক এবং ভয়ংকর অনাচার ও হিংসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছিল। তাই এনআরসি ভবিষ্যতের দলিল হয়ে উঠতে পারে।’
আসামের বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝে আসাম নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যের সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এসব আর্ম চেয়ার কমেন্টররা আসামের একটি বিকৃত ছবি মানুষের সামনে তুলে ধরছেন। যার ফলে অসামের উন্নয়ন কর্মসূচি ধাক্কা খাচ্ছে।’
রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘এনআরসি কোনো নতুন বা মহান ধারণা নয়। ১৯৫১ সালেই বিষয়টি চালু হয়। বর্তমানে ১৯৫১ সালের এনআরসির আপডেটের কাজ চলছে।’ প্রধান বিচারপতি এনআরসি নিয়ে কিছু সংবাদপত্রের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন রিপোর্টিং গোটা পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলছে।’
আসামে এনআরসি হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। আর তা নজরদারি করছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আসামের এনআরসি থেকে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন নাগরিক বাদ পড়ে এখন তাঁরা আতঙ্কের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন।
আসামের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে, এই বাদপড়া ১৯ লাখ মানুষ কোথায় যাবেন? এ বছরের ৩১ আগস্ট এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে আসাম সরকার। সেখানেই বাদ যায় অধিকাংশ বাঙালি হিন্দু-মুসলমানের নাম। এরপরই এই এনআরসি নিয়ে তেতে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস এবং বাম দল এই এনআরসির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলন এখনো জারি রেখেছে। একযোগে তারা ঘোষণাও দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি কার্যকর করতে দেওয়া হবে না। কার্যকর করতে গেলে মানুষের লাশের ওপর দিয়ে কার্যকর করতে হবে এনআরসি। কারণ, বিজেপি সরকারের এই এনআরসি মানবে না পশ্চিমবঙ্গ।
এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা দেয়, ভারতে অনুপ্রবেশকারী রুখতে কার্যকর করা হবে এনআরসি। তবে এই এনআরসির কোপে পড়বে না ভারতে আসা বাংলাদেশের হিন্দু উদ্বাস্তু এবং শরণার্থীরা। তাঁরা যথারীতি ভারতে থাকবেন। তাঁদের দেওয়া হবে নাগরিকত্ব।