ভারতের মিজোরাম রাজ্যে বসবাসকারী চাকমা জাতিগোষ্ঠীর লোকজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। মিজোরাম সরকার এসব অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্ত করতে আসামের মতো এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি কার্যকর করতে চাইছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে চাকমারা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা চাকমাদের প্রতি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ও উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। চাকমারা মিজোরামের ভূমিপুত্র। আজ বুধবার কলকাতার সংবাদমাধ্যমে তাঁরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য তাঁরা মেনে নেবেন না। এটা চাকমাদের কাছে ভিত্তিহীন ও দুর্ভাগ্যজনক অভিযোগ।
ভারতের উত্তর-পূর্বের পাহাড়বেষ্টিত রাজ্য মিজোরামের বেশির ভাগ নাগরিক মিজো সম্প্রদায়ের। পাশাপাশি রয়েছেন চাকমারাও। মিজোরামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার অভিযোগ, এই রাজ্যের চাকমারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে মিজোরামে এসেছে।
জোরামথাঙ্গা গত বছরের নভেম্বর মাসে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। তিনি মিজোরামের মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এমএনএফ) প্রেসিডেন্ট।
চাকমা মানবাধিকার সংগঠনের নেতা সুহাস চাকমা অভিযোগ করেছেন, ১৯৮৯ সাল থেকে মিয়ানমার থেকে আসা লক্ষাধিক শরণার্থীকে মিজোরামের চাম্পাইয়ে শিবির গড়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওই শিবির ভেঙে দেওয়ার পরও মিয়ানমারের কোনো শরণার্থীকে মিজোরাম থেকে তাড়ানো হয়নি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। অথচ এ বছরের জুলাই মাসে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আসা ১১০ জন শরণার্থীকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল মিজোরাম সরকার। মুখ্যমন্ত্রী এসব অনুপ্রবেশের কথা বললেন না। বরং লুসাই হিলের আদি বাসিন্দা চাকমাদের তাড়ানোর কথা বললেন।
১৮৯৮ সালে ইংরেজ আমলে লুসাই হিলকে আসামের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়। সেই লুসাই হিল ছিল চাকমাদের। এখন সেই লুসাই হিল পশ্চিম মিজোরামের অন্তর্ভুক্ত। চাকমারা তাই নিজেদের মিজোরামের আদি অধিবাসী এবং ভূমিপুত্র বলে দাবি করেন। ১৯৭২ সালে লুসাই হিলকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে চাকমাদের তফসিলভুক্ত উপজাতির মর্যাদা দিয়ে গঠন করা হয় স্বশাসিত অঞ্চল। তাই চাকমা নেতারা প্রশ্ন করেছেন, কোন যুক্তিতে চাকমাদের অবৈধ বাংলাদেশি বললেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা?