মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বহিষ্কৃত বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দলের দিল্লি শাখার মিডিয়া বিভাগের প্রধান নবীন জিন্দলের মানহানিকর মন্তব্যের জেরে সৃষ্ট সহিংসতায় ঝাড়খন্ডের রাঁচিতে ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। গত শুক্রবার অবমাননাকর মন্তব্যকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। পূর্ব ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে শুক্রবারের বিক্ষোভে দুজনের মৃত্যু হয়। এ বিক্ষোভে আহত হয়েছেন ২২ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ১০ পুলিশ সদস্য। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, রাঁচি পুলিশ সহিংসতার ঘটনার তদন্ত করছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় নয়টি এফআইআর দাখিল করা হয়েছে। পুলিশ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ১০ হাজার জনকে আসামি করেছে।
এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার পর্যন্ত রাঁচিতে পুলিশের করা এফআইআরের সংখ্যা ২৫ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া রাঁচি ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় স্পর্শকাতর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা তিন ঘণ্টা পর চালু করে দেওয়া হয়েছে।
ঝাড়খন্ড পুলিশের মুখপাত্র আইজি অপারেশন আমল হোমকার বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, পুলিশের তদন্তকারী দল বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনেক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচি ঘিরে বিভিন্ন স্থানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আড়াই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন ভারতের শাসক দল বিজেপির রাষ্ট্রীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দলের দিল্লি শাখার মিডিয়া বিভাগের প্রধান নবীন জিন্দল। অবমাননাকর মন্তব্যের ১০ দিন পর পশ্চিম এশিয়ার উপসাগরীয় অঞ্চলের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে বিজেপি ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নবীনকে বহিষ্কার করা হয়, নূপুরকে সাময়িক বরখাস্ত। সরকারিভাবে বলা হয়, ওই মন্তব্য ভারত সরকারের নয়। ভারত সব ধর্মকে সমানভাবে শ্রদ্ধা করে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ওই দুজনের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ, সাহারানপুর, প্রয়াগরাজ, মোরাদাবাদসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভ হয় দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, বিহার, কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গের বহু স্থানে।
শুক্রবার দিনভর বিক্ষোভের পর শনিবার পরিস্থিতি সর্বত্রই ছিল থমথমে। উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন শহরে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর সবাইকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অপরাধীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রাজ্যে দাঙ্গা মোকাবিলায় যোগী আদিত্যনাথ প্রথমে বুলডোজার নামিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমার শুক্রবার বুলডোজারের ছবি দিয়ে টুইট করে বলেছিলেন, ‘উপদ্রবকারীদের মনে রাখতে হবে, প্রতি শুক্রবারের পর শনিবার আসে।’ উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে শনিবারই সহিংসতায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। গতকাল প্রয়াগরাজে পুলিশের উপস্থিতিতে এক রাজনৈতিক নেতার বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে আদিত্যনাথের প্রশাসন। প্রয়াগরাজের ওই নেতার নাম জাভেদ মোহাম্মদ। তাঁকে প্রয়াগরাজে শুক্রবারের সহিংসতার নাটের গুরু বলে অভিযোগ এনেছেন বিজেপির নেতারা। প্রয়াগরাজ ছাড়াও কানপুরে বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এনডিটিভি জানায়, সহিংসতার ঘটনায় উত্তর প্রদেশের পুলিশ তিন শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।