যদিও প্রথম দিকে পেছনের সারিতে ছিলেন, ফিরোজ গান্ধী খুব শিগগিরই রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নক্ষত্র হয়ে উঠলেন। ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকে জওহরলাল নেহরু যেমনটা ছিলেন, ফিরোজও তেমনি কংগ্রেসে বামপন্থী রয়ে গেলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ভারতে জীবনবিমার জাতীয়করণ করার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করেন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ফিরোজ ভারতের সংসদীয় কার্যক্রমের খবরের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশে অনুমতি দিয়ে আইন প্রণয়নেও ভূমিকা রাখেন।
তবে এসব সত্ত্বেও ইন্দিরার সঙ্গে সম্পর্কটা উষ্ণ করতে পারেননি ফিরোজ। ‘প্রধানমন্ত্রীর জামাতা’ পরিচয়টাও তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না। এদিকে ফিরোজের পরকীয়ারও গুঞ্জন ছিল। সে সময় ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য তারকেশ্বরী সিনহা, মাহমুনা সুলতান এবং সুভদ্র জোশির সঙ্গে তাঁর মাখামাখিটা ছিল অনেকটা জনসমক্ষে। তবে তারকেশ্বরী পরবর্তী সময়ে ফিরোজের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্ক থাকার কথাটা অস্বীকার করেছিলেন।
শুধু ফিরোজের পরকীয়াই নয়, সে সময় আলোচনায় ছিল ইন্দিরা গান্ধীর পরকীয়াও। অনেকেই ভেবেছিল, এই দম্পতির ছাড়াছাড়ি আসন্ন। গুঞ্জন ছিল বাবা জওহরলাল নেহরুর সহকারী এম ও মাথাইয়ের সঙ্গে ইন্দিরার সম্পর্ক ছিল। আশ্চর্য ব্যক্তিত্বের, চটুল আর উদ্যমী মাথাই তখন ‘ম্যাক’ নামে খ্যাত। নেহরু তাঁর প্রতি পুরোপুরি ভরসা করতেন।
প্রচার রয়েছে, নিজের আত্মজীবনী ‘রেমিনিসেন্স অব দ্য নেহরু এজ’-এ তিনি ‘শি’ শিরোনামে একটি অধ্যায় রেখেছিলেন মাথাই। এই অধ্যায়ে এক ‘আবেগী’ ইন্দিরাকে বর্ণনা করেছেন, যাঁর সঙ্গে লেখকের এক যুগের সম্পর্ক ছিল। এই অধ্যায়ের একটি সংস্করণ ডানপন্থী অনেক ওয়েবসাইটেই পাওয়া যায়। এতে ইন্দিরার শারীরিক বর্ণনায় বলা হয়েছে, তাঁর নাক ছিল ক্লিওপেট্রার নাকের মতো, চোখজোড়া ছিল পলিন বোনাপার্টের চোখের মতো, আর বক্ষদেশ ছিল ভেনাসের মতো। এই অধ্যায়ে অনেক অন্তরঙ্গ সময়ের বর্ণনাও দেওয়া হয়েছে।
বইয়ের ‘শি’ অধ্যায়ে এতটাই খোলামেলা বর্ণনা ছিল যে এটা আর কখনোই প্রকাশিত হয়নি। কেউ কেউ ধারণা করেন, মাথাই আসলেই ওই অধ্যায়টা তাঁর বইতে রেখেছিলেন এবং শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানেকা গান্ধী সেই একই অধ্যায় (বর্তমানে যা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে) প্রচার করে দিয়েছেন।
নেহরুর জীবনীকার সারভেপাল্লি গোপাল বলেন, ‘ইন্দিরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই প্রণোদিত করতেন তাঁকে (মাথাই)’।
তবে কংগ্রেসদলীয় ভারতের সাবেক রাজনীতিক ও আমরা নটবর সিংয়ের ভাষ্য, ‘তিনি (মাথাই) সিআইএর (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) ঘনিষ্ঠ ছিলেন....আর সম্পর্কের বিষয়ে বলতে গেলে তিনি নিজের স্বার্থেই এসব গল্প ছড়িয়েছিলেন।’