ভারতের আসাম রাজ্যে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুজন নিহত হয়েছেন। প্রথামাফিক পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ কারণে ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুই ব্যক্তি হলেন কামরুল ইসলাম (৩৫) এবং আনোয়ার হোসেন (২৩)।
গত এক বছরে (মে ২০২১ থেকে মে ২০২২) ৫১ জন আসামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গিয়েছে। এসব ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বড় অংশ মুসলমান সম্প্রদায়ের। গতকালের ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনার মাধ্যমে ওই তালিকায় আরও দুই নাম যুক্ত হলো। এ সময়ে বন্দুকযুদ্ধে আহত হয়েছেন ১৩৯ জন। এই তথ্য আসামের রাজধানী গুয়াহাটির আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে আসাম পুলিশ।
গত শনিবার কামরূপনগর জেলার জোরহাট এলাকা থেকে আসাম পুলিশ কামরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন এবং আবুল হোসেন বড় ভূঁইয়াকে (২৬) গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে গাড়ি চুরির অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের দক্ষিণ আসামের শিলচরে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁরা হেফাজত থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ তাঁদের থামতে বলে। তাঁরা কথা না শোনায় পুলিশ গুলি চালায়, যাতে কামরুল এবং আনোয়ারের মৃত্যু হয়। আবুল হোসেনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই এই বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য, সম্পূর্ণ নিরস্ত্র দুই ব্যক্তির ওপরে গুলি চালানো হয়েছে এবং গুলি কোমরের নিচের অংশে চালানো হয়নি, তা যদি হতো তাহলে ওই দুই ব্যক্তি বেঁচে যেতেন। সেটাই এ ক্ষেত্রে পুলিশের করা উচিত ছিল বলে মানবাধিকার কর্মীদের দাবি। দ্বিতীয় প্রশ্ন, মৃত ব্যক্তির বুকে এবং পেটে কীভাবে গুলি লাগল, যদি তাঁরা পুলিশের দিকে পেছন করে পালানোর চেষ্টা করে।
তৃতীয়ত, ওই তিন অভিযুক্তকে কোন থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। গুয়াহাটি পুলিশ ট্যুইট করে জানিয়েছে, তিন অভিযুক্তকে পূর্ব গুয়াহাটি পুলিশ জেলার অফিসাররা গ্রেপ্তার করে। অন্যদিকে কাছাড় জেলার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট রামনদীপ কৌর জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছিল শিলচরের পুলিশ।
কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর ক্ষেত্রে আসাম এখন ভারতের মধ্যে অন্যতম এগিয়ে থাকা রাজ্য। যাবতীয় মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সেখানে নিয়মিত বন্দুকযুদ্ধে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ভারতে বিশেষ আন্দোলন, মামলা-মোকদ্দমা বা লেখালেখি কিছুই হচ্ছে না।
সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী তিস্তা শেতলবাদ আসামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে অত্যাচার নিয়ে সরব হয়েছিলেন এবং রাজ্যের আদালতে মামলাও করছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের প্রশ্ন তুলে যাঁদের দীর্ঘদিন বেআইনিভাবে জেলে রাখা হয়েছে, তাঁদের মুক্ত করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ার ফলে সেই কাজ এখন বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।