আসামে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়ল ১৯ লাখ

আসামের গুয়াহাটিতে প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকার (এনআরসি) জন্য কাগজপত্র পরীক্ষা চলছে। এএফপি ফাইল ছবি।
আসামের গুয়াহাটিতে প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকার (এনআরসি) জন্য কাগজপত্র পরীক্ষা চলছে। এএফপি ফাইল ছবি।

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকা (এনআরসি) আজ শনিবার প্রকাশিত হয়েছে। ওই তালিকায় চূড়ান্তভাবে ঠাঁই হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ লোকের। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ।

আসামের এনআরসি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। আজ সকাল ১০টায় অনলাইনে তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা প্রকাশের পর ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। খবর এনডিটিভির।

বিজেপিশাসিত এই রাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে, এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর কোনো রকম প্রতিবাদ বরদাশত করা হবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত ২০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। মোট আড়াই হাজার এনআরসি সেবাকেন্দ্র আগলাতে শুরু করেছে নিরাপত্তারক্ষীরা। বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দিসহ স্পর্শকাতর ১৪ জেলার ওপর বিশেষ নজর রেখেছে প্রশাসন। এনআরসি ঘিরে গোটা রাজ্যের পরিবেশ থমথমে।

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগের দিন শুক্রবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, কেউ যেন আতঙ্কগ্রস্ত না হন। যাঁদের নাম তালিকায় থাকবে না, তাঁদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে (এফটি) আবেদন জানাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নাগরিকত্ব প্রমাণে সরকার তাঁদের প্রত্যেককে সব রকমের সহায়তা দেবে।

একই রকম আবেদন জানিয়েছে আসাম রাজ্য পুলিশও। বলেছে, এনআরসিতে নাম না ওঠার মানে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া নয়। যাঁদের নাম উঠবে না, তাঁরা এফটিতে আবেদনের জন্য ১২০ দিন সময় পাবেন। এই সময়সীমা আগে ছিল ৬০ দিন। সরকার প্রত্যেককে আইনি সহায়তা দেবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অতিরিক্ত আরও এক হাজার এফটি রাজ্যে খোলা হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ট্রাইব্যুনালে ব্যর্থ হওয়ার অর্থও বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া নয়। ব্যর্থ নাগরিকেরা প্রথমে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন, তারপর সুপ্রিম কোর্টের। আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হলে কাউকেই ডিটেনশন ক্যাম্পে (ডি–ক্যাম্প) পাঠানো হবে না।

১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তিতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরির কথা বলা ছিল। ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ। কিন্তু দীর্ঘ টালবাহানায় নাগরিকপঞ্জি তৈরি করা হয়ে ওঠেনি। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এনআরসি তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়।

গোটা রাজ্যে খোলা হয় ২ হাজার ৫০০টি এনআরসি সেবাকেন্দ্র। ৫২ হাজার সরকারি কর্মী নিযুক্ত হন নাগরিক তালিকা তৈরির কাজে। খরচ হয় ১ হাজার ২২০ কোটি রুপি। নাগরিকপঞ্জিতে নাম তোলার জন্য মোট আবেদন জমা পড়ে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪। চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় স্থান হয় ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭ জনের। বাতিলের তালিকায় ঠাঁই হয় ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জনের। পরে বাদ দেওয়া হয় আরও ১ লাখ ২ হাজার ৪৬৫ জনকে।

আরও পড়ুন
এনআরসি: ২০ লাখ কমায় অস্বস্তিতে বিজেপি