ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যর প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকায় (এনআরসি) চূড়ান্তভাবে ঠাঁই হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ লোকের। আজ শনিবার সকালের প্রকাশিত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ।
আসাম সরকার জানিয়েছে দিয়েছে, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের এখনই বিদেশি তকমা দেওয়া হবে না। তাঁদের গ্রেপ্তারও করা হবে না৷ কারণ, এনআরসির পুরো ব্যাপারটি আদালতের বিচারাধীন। তাঁরা নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে বিদেশি ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে পারেন। নিতে পারবেন আইনি সাহায্য। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
তালিকা প্রকাশের পর ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। তালিকা অনুযায়ী এই ১৯ লাখের বেশি আসামবাসী ভারতীয় নাগরিক নন। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠছে, যাঁদের নাম বাদ পড়ে গেল, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে? সে ক্ষেত্রে বাদ পড়া ব্যক্তিদের আইনের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আপাতত আর কোনো উপায় নেই ৷ www.nrcassam.nic.in, www.assam.mygov.in বা www.assam.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে তালিকা দেখতে পাবেন যে-কেউ। আর সেখানেই সব জানা যাবে।
একটি বেসরকারি সংস্থা (এনআরসিতে নাম বাদ পড়াদের আইনি পরামর্শ দিচ্ছে) জানাচ্ছে, এনআরসিতে বাদ পড়া ব্যক্তিরা নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আইনি লড়াইয়ে নামতে হবে। আর এ জন্য ব্যয়ও হবে অনেক। আইনি সাহায্য নিতে গড়ে প্রত্যেক ব্যক্তির খরচ পড়বে ৪০ হাজার ভারতীয় রুপির মতো। যদি ওই মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়, তবে খরচ আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে তা হবে কয়েক লাখ ভারতীয় রুপির ব্যাপার। কারণ, আইনজীবীর ফি অনেক বেশি। এনআরসিতে বাদ পড়া ব্যক্তিরা ৪ মাস বা ১২০ দিনের মধ্যে নাগরিকত্বের দাবি জানিয়ে ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে পারবেন।
আসামের গুয়াহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী নকিবুর জামান বলেন, এবার কিছু অসাধু আইনজীবী ও ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে নেমে পড়বেন। যাঁদের নাম এনআরসিতে নেই, তাঁদের ভুল বুঝিয়ে অনেকেই অর্থ নেবেন। তিনি জানান, এনআরসির ব্যাপারে ২০০ আইনজীবীর একটি দল ফ্রিতে মানুষকে আইনি পরামর্শ দেবে।
আগামী সোমবার থেকে আসামে ২০০ বিদেশি ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করবে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আসামজুড়ে মোট এক হাজার বিদেশি ট্রাইব্যুনাল কাজ করবে।
চূড়ান্ত এনআরসি: সরকারি ওয়েবসাইট ক্র্যাশ
আসামের প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকা (এনআরসি) প্রকাশের পরই হুমড়ি খেয়ে মানুষ ওয়েবসাইটে ঢুকেছেন। আর ওই সরকারি ওয়েবসাইটে এত মানুষ একসঙ্গে সার্চ শুরু করায় সাইটটি ডাউন হয়ে যায়। তালিকা প্রকাশ পরেই পুরো আসাম কার্যত থমথমে। রাস্তায় পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে।
হোম গার্ড, টাস্কফোর্স ও ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি মোতায়েন করা হয়েছে আসামে। কোনো রকম বিপদে পড়লে মানুষ জানাতে পারবেন পুলিশকে। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, নিউজ এইটিন, হিন্দুস্তান টাইমস