শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবারও কলকাতায় বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। এ আন্দোলনে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণের ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
গত ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ ওই চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় রাজ্যের নানা প্রান্তসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনের কারণে যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে গত এক মাসে পশ্চিমবঙ্গে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চরম অস্বস্তি বাড়ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে।
অবশ্য চিকিৎসকদের দাবি, এর চেয়ে বেশি মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গে। এসব মৃত্যু তারই অংশ। আন্দোলনের জন্য রোগীদের চিকিৎসায় গাফিলতি হচ্ছে না। আন্দোলন করছেন জুনিয়র চিকিৎসক ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা, জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা নন। আন্দোলন থামাতেই সরকার বিষয়টি সামনে আনছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দাবি মানতে রাজ্য সরকারকে সাত দিন সময় দেওয়া হবে। এরপরও যদি দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে গণহারে সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকেরা পদত্যাগ করবেন। যদিও পদত্যাগের বিষয়টি এখনো সেভাবে বলা হয়নি। তবে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে যদি মমতার সরকার চিকিৎসকদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়তে বেশি সময় লাগবে না।
চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গত সোমবার তৃতীয়বারের মতো সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। শুনানিতে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। এরপরই আদালত পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র চিকিৎসকদের মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর ব্যত্যয় হলে রাজ্য প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে জানান আদালত।
আদালতের এ নির্দেশের পরই চিকিৎসকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি, হত্যার বিচার পেতে সময় লাগতেই পারে। কিন্তু তাঁরা যে নিরাপত্তার জন্য দাবি তুলেছিলেন, সেগুলো নিয়ে কেন সিদ্ধান্ত জানায়নি আদালত। তাঁদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্যও শোনেননি আদালত। নানাভাবে চিকিৎসকদের নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ আন্দোলনকারীদের একাংশের।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন; হাসপাতালের সব জায়গায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা; নারী-পুরুষ চিকিৎসকদের বিশ্রামাগার ও শৌচাগারের আলাদা ব্যবস্থা রাখা; রাত্রিকালীন দায়িত্ব পালনের সময় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু দাবি তুলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। যত দিন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা এসব ব্যবস্থা না নিচ্ছেন, তত দিন আন্দোলন চলবে বলে তাঁরা জানান।
চিকিৎসকেরা বলছেন, শুনানিতে চিকিৎসকদের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিচারকেরা। বরং নির্দেশ দেন, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় সবাইকে কাজে ফিরতে হবে। না হলে রাজ্য প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ নির্দেশ বিচারের নামে প্রহসন। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা প্রতিনিয়ত তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
এরপরই মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য ভবনের দিতে যাত্রা করেন কয়েক হাজার চিকিৎসক। তাঁদের বক্তব্য, যতক্ষণ না দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। এরপরই স্বাস্থ্য ভবনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁদের বক্তব্য জানাতে পাঁচজন ভেতরে আসতে পারেন।
চিকিৎসকদের দাবি, এক মাস ধরে একই দাবি জানিয়ে আসছেন, সরকারের পক্ষ থেকে হচ্ছে, হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু কোনো একটি হাসপাতালের বিশ্রামের কক্ষের বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যন্ত বসানো হয়নি। ফলে আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। আর একজন চিকিৎসকের সঙ্গেও যাতে এ রকম ঘটনা না ঘটে। তাই যত দিন তাঁদের দাবি মানা না হবে, তাঁরা দায়িত্বে ফিরবেন না।
নিজেদের এ দাবিতে স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন চিকিৎসকেরা। অন্যদিকে বন্ধ স্বাস্থ্য ভবনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।