ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক না হওয়ার জন্য ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তিদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার আবদুল বাসিত। এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, কাশ্মীরসহ সব বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনায় পাকিস্তান আগ্রহী হলেও ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তা চায় না। তারা চায় না এই উপমহাদেশে শান্তি থাকুক। তিনি বলেছেন, ভারতের মুসলমানদের ওপর উগ্র হিন্দুদের আক্রমণ উদ্বেগজনক।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এর আগে গো-হত্যার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা ও শিবসেনাসহ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব নিয়ে এক বিবৃতি প্রচার করা হয়েছিল। তার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, অহিংসা ও মানবাধিকার নিয়ে পাকিস্তানের পরামর্শ ভারতের প্রয়োজন নেই। তার পরেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতি জারি করা হয়। হাইকমিশনারের মন্তব্যে পরিষ্কার, সম্প্রতি ভারতে যা চলছে, তা বহির্বিশ্বে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।
প্রধানত এ কারণেই ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম মারফত উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, মতপার্থক্য থাকলে তার জন্য আলোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু তাণ্ডব বা দৌরাত্ম্য নয়। জেটলি বলেন, যারা এ ধরনের অপকর্ম করছে, তারা চরমভাবে সমালোচিত হচ্ছে। শুভ চিন্তার মানুষজন ওদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করছেন। তিনি বলেন, যে যে বিষয় নিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে সেগুলোর কিছু কিছু খুবই গুরুতর বিষয়। কিছু বিষয়ে সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কিছু বিষয় জম্মু-কাশ্মীরের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলের ভারসাম্যের পক্ষে গুরুতর। ফলে এসব বিষয় ভদ্র-সভ্যভাবে আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা দরকার—তাণ্ডব বা দৌরাত্ম্য নয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি একটি সংবাদপত্রে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এবং এ ধরনের ঘটনা অনুমোদন না করলেও প্রকাশ্যে তাঁর মত এখনো প্রকাশ করেননি। সে জন্য এখনো তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তিনি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ভারতের বহুত্ববাদ তুলে ধরছেন? কেন তিনি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এই অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না, সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে নিজে মুখ না খুললেও তাঁরই নির্দেশে দলের সভাপতি অমিত শাহ দলের বিতর্কিত জনপ্রতিনিধিদের ডেকে বলে দিয়েছেন, সরকারকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, এমন কিছু করা যাবে না। তাতে কিছুটা রাশ টানা হলেও শরিক শিবসেনাকে বিজেপি বাগে আনতে পারছে না। তাদের তাণ্ডবে ভারত-পাকিস্তান মৈত্রী ক্রিকেট নিয়ে ঘোর সংশয় দেখা দিয়েছে। শিবসেনা এমনই আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার ও সাবেক ক্রিকেটার ভাষ্যকার ওয়াসিম আকরাম ও শোয়েব আখতার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ছেড়ে দেশে ফিরে গেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান মুম্বাইয়ে বৈঠক পর্যন্ত করতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি অসন্তুষ্ট হলেও শিবসেনাসহ অন্য কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের রাশ টানা সম্ভব হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে, বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরে। গরুকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যা চলছে, তাতে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মঙ্গলবারও উপত্যকা অশান্ত ছিল।