নোবেল জয়ের পর বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ভারতজুড়ে রাজনীতি চলছে। বিজেপি অভিজিৎকে বামপন্থী অর্থনীতিবিদের আসনে বসিয়ে ফেলেছে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন বিজেপির নেতারা। তবে কলকাতার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত মনে করেন, অভিজিৎকে নিয়ে কারও সমালোচনা করা উচিত নয়।
গতকাল শনিবার এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকরে রন্তিদেব বলেন, বিজেপিকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিতের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে। দলকে আরও সংযত হতে হবে।
রন্তিদেব বলেন, বাঙালি হিসেবে অভিজিৎ নোবেল পেয়েছেন। তাঁর অর্থনৈতিক তত্ত্ব কারও পছন্দ না হতে পারে, আবার হতেও পারে। তাই এ নিয়ে এখন সমালোচনা করা অনুচিত। বিশেষ করে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যে সমালোচনা, তা কাম্য নয়। বিরোধিতা যদি করতে হয়, তা করতে হবে তাত্ত্বিকভাবে। ব্যক্তিগত জীবন টেনে আনা উচিত নয়। বরং সামনের ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, অভিজিৎকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য বাংলার মানুষ ভালো চোখে নিচ্ছে না। বাংলার মানুষ এখনো তাঁর পাশে রয়েছেন। সুতরাং বিজেপির এমন কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না, যাতে কার্যত বাংলার মানুষ বিজেপির প্রতি বিরাগভাজন হন।
গত শুক্রবার ভারতে এসেছেন অভিজিৎ। ওই দিন গভীর রাতে দিল্লি পৌঁছান তিনি। আগামী মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা রয়েছে।
দিল্লিতে পৌঁছার পর গতকাল শনিবার সকালে অভিজিৎ ছুটে যান তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢুকে পড়েন তাঁর স্মৃতিবাহী ব্রহ্মপুত্র হোস্টেলে। সেখানে কিছুক্ষণ টেবিল টেনিস খেলেন তিনি। চা খান। এ সময় হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। তাঁরা এই নোবেল বিজয়ীর সঙ্গে সেলফি তোলেন। সেলফিতে যোগ দেন বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সমর্থকেরাও। তাঁরা বলেন, ‘অভিজিৎ আমাদের দেশের গর্ব। তাঁর নীতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তিনি আমাদের গৌরব। তিনি এনে দিয়েছেন নোবেল।’
নোবেলজয়ের পর অভিজিৎকে একজন বামপন্থী অর্থনীতিবিদের তকমা দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। তাঁরা বলছেন, তাঁর অর্থনীতির তত্ত্ব ভারতে খাটে না। মহাত্মা গান্ধীর নীতিই ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপান।
গত শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, ‘নোবেল পাওয়ার জন্য আমরা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানাই। আপনারা সবাই জানেন, উনি বামপন্থী মানসিকতার। কংগ্রেস-ঘোষিত ন্যায় প্রকল্পকে উনি সমর্থন দিয়েছিলেন। ন্যায় প্রকল্পের গুণগান গেয়েছেন। ভারতের মানুষ ওনার অর্থনৈতিক তত্ত্বকে খারিজ করে দিয়েছে।’
বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘বামপন্থী অর্থনীতি এ দেশে চলে না। মানুষ বামপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদেশের কোথায়ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্ব কাজে লাগতে পারে। তবে ভারতে দারিদ্র্য দূরীকরণে তাঁর তত্ত্ব কাজে আসবে না। মহাত্মা গান্ধীর নীতিতেই ভারতের আর্থিক উন্নতি সম্ভব’।
রাহুল সিনহা বলেন, অভিজিৎ দিল্লিতে পড়াশোনার সময় ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১০ দিন জেল খেটেছিলেন দিল্লির তিহার কারাগারে। বিদেশিনীকে বিয়ে করলে নোবেল পাওয়া যায়, যেমনটা অধ্যাপক অমর্ত্য সেনও পেয়েছিলেন। অভিজিৎ দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন ফ্রান্সের এস্থার ডাফলোকে। অমর্ত্য সেনও দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন বিদেশি।
অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে অভিজিতের অর্থনৈতিক তত্ত্ব ভারততে অর্থনীতির উন্নয়নের পথ দেখাতে পারে।
অভিজিৎকে অভিনন্দন জানিয়ে এক টুইটে রাহুল বলেন, ভারতের আর্থিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ন্যায় প্রকল্পের রূপরেখা তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু এখন ন্যায় প্রকল্পের পরিবর্তে চলছে মোদি নীতি, যা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে।
অভিজিৎকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এক ঘোষণায় তিনি বলেছেন, ‘অভিজিৎ কলকাতায় এলে তাঁকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তিনি আমাদের দেশের গর্ব, বাঙালিদের গর্ব, রাজ্যের গর্ব।’