বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে কলকাতায় গভীর শোকের ছায়া নেমেছে। কলকাতায় এই মানুষটির পদচারণ ছিল নিয়মিত। বইমেলা, সাহিত্য অনুষ্ঠান, বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িকতার বাণী শোনাতেন।
শিল্প–সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ভারত সরকার অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে সে দেশের রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত করেছিল। তিনি পেয়েছিলেন কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি–লিট। শুধু তা–ই নয়, ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে তিনি পেয়েছিলেন আনন্দ পুরস্কারও।
কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, ‘এ যেন আমাদের মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। তিনি ছিলেন এই দুই বাংলার ধর্মমুক্ত, মানবিক সংস্কৃতির প্রধান অভিভাবক। আজ দক্ষিণ এশিয়ার বিবেকের একটি কণ্ঠস্বর চিরকালের মত স্তব্ধ হয়ে গেল। তিনি আমাদের মধ্যে আছেন এবং থাকবেন।’
সাহিত্যিক কৃষ্ণা বসু বলেছেন, ‘অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নিঃসন্দেহে একজন সাহিত্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল প্রশ্নাতীত। সাহিত্যে স্মরণযোগ্য ব্যক্তিত্বের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তাঁকে আমরা ভুলিনি, ভুলতে পারব না।’
কবি সুবোধ সরকার বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমাদের দুই বাংলার জ্ঞানচর্চার প্রধান প্রবক্তা। তাঁর চলে যাওয়ায় বাংলা সাহিত্যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। সতর্ক আর সাবধান করে দেওয়ার মতো মনীষী আর রইল না।’
সাহিত্যিক বাণী বসু বলেন, ‘অধ্যাপক অনিসুজ্জামান ছিলেন আপাদমস্তক একজন ভদ্রলোক। পণ্ডিত। বিদ্বান । সজ্জন। তাঁর প্রতিভা স্মরণ করবে দুই বাংলার মানুষ।’
কবি শ্রীজাত বলেন, ‘বাঙালি আজও তাঁর জন্য গর্ববোধ করে। আজ যখন সংকীর্ণতা আর অজ্ঞতার দম্ভে পৃথিবী ফুঁসছে, তখন প্রাজ্ঞ, মুক্ত, অপার এমন একজন মানুষ চলে যাওয়ার ক্ষতি আমরা পরিমাপ করতে পারব না। প্রণাম জানাই অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে।’
কবি বীথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আনিসুজ্জামানের প্রয়াণ বাঙালির চিন্তাভাবনার জগতে একটা শূন্যতা এনে দিল। এত বড় পণ্ডিত মানুষ থাকলেও তিনি ছিলেন এক সহজ, সরল অনাড়ম্বর মানুষ। কথায় ছিল উষ্ণ রসবোধ।’
কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইমানুল হক বলেছেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনে অন্যতম ছিলেন। ছিলেন মিলনের সেতু। তাঁর চলে যাওয়ায় বিরাট ক্ষতি হলো।
মমতার শোক
শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাঁর শোকবার্তায় বলেন, ‘বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সৈনিক ছিলেন তিনি। ছিলেন পরিকল্পনা কমিশন ও জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য। অধ্যাপনা করেছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, প্যারিস, নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ে । একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, পদ্মভূষণ, আনন্দ পুরস্কারসহ অনেক সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদকও পান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শিক্ষা ও সাহিত্য জগতে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো। আমি আনিসুজ্জামানের পরিবার, পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’