মেরিন লে পেন ও এমানুয়েল মাখোঁ
মেরিন লে পেন ও এমানুয়েল মাখোঁ

ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকে ফ্রান্স

গুরুত্বপূর্ণ পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপের জন্য আজ শনিবার থেকেই বামপন্থা ও ডানপন্থায় বিভক্ত হয়ে পড়া ফ্রান্সের জনগণকে প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। আগামীকাল রোববার প্রথম ধাপের এ নির্বাচনে অভিবাসনবিরোধী ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সমালোচনাকারী নেতা মেরিন লে পেনের অতি ডানপন্থী ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) দল প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারে। গত শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচার চালান। নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ৭ জুলাই।

অধিকাংশ জনমত জরিপে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে আরএন ৩৫ থেকে ৩৭ শতাংশ ভোট পেতে পারে। লে পেনের দলকে টক্কর দিতে পারে বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোট। জরিপে দেখা গেছে, এ জোট ২৭ থেকে ২৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে। অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে এমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থী জোট জাতীয় পরিষদ অর্ধেকের বেশি আসন হারাতে পারে। জরিপে দেখা গেছে, তাদের জোট ২০ থেকে ২১ শতাংশ ভোট পেতে পারে।

ইউরেশিয়া গ্রুপ রিস্ক কনসালটেন্সির ইউরোপ প্রধান মুজতবা রহমান বলেন, জরিপ মিলে গেলে ফ্রান্সে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হতে পারে। এতে দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। ফ্রান্সের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে এ ধরনের অচলাবস্থার কোনো নজির নেই।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনে খারাপ ফলের জেরে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন মাখোঁ। একই সঙ্গে দেশটিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণাও দেন। তাঁর এ ঘোষণায় দেশটির অনেকেই হতবাক হন। এ ছাড়া ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

সিএনএন জানায়, দুই সপ্তাহের মধ্যে ফ্রান্সে একটি কট্টর-বাম বা কট্টর-ডান সরকার গঠিত হতে পারে অথবা কোনো ব্লক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। এতে দেশে এবং দেশের বাইরে নানা সমস্যায় পড়বে ফ্রান্স।

মাখোঁ সাহসী সিদ্ধান্তে ভয় পান না। মাত্র এক বছর আগে গড়া দল নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আগাম নির্বাচন তাঁর দলের জন্য বিশাল ঝুঁকি। প্যারিসের সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কেভিন আর্সেনোক্স সিএনএনকে বলেন, মাখোঁ যদি তাঁর বাজির মূল্য তুলে আনতে পারেন, তাব তিনি একজন দক্ষ কৌশলবিদ হিসেবে নাম কুড়াবেন। তা না হলে তিনি ইতিহাসে এমন একজন হয়ে যাবেন, যিনি মূলত ফ্রান্সের ঐতিহ্যগত পার্টি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিলেন বলে গণ্য হবেন।

ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদের ৫৭৭ আসন রয়েছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য একটি দলের প্রয়োজন ২৮৯। বিদায়ী সরকারে মাখোঁর জোটের আসন ছিল মাত্র ২৫০টি। তাই আইন পাস করার জন্য অন্যান্য দলের সমর্থন প্রয়োজন পড়ে।

নির্বাচনের আগেই মাখোঁর সরকারের নানা বিষয়ে সমালোচনা করে আসছেন লে পেন। ইউক্রেনে সেনা পাঠানো নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে সতর্ক করেছেন দেশটির অতি ডানপন্থী ন্যাশনাল র‌্যালি দলের নেতা মেরিন লে পেন। তিনি বলেন, তাঁর দল পরবর্তী সরকার গঠন করলে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর সুযোগ পাবেন না মাখোঁ।

স্থানীয় পত্রিকা লে টেলিগ্রামকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেরিন বলেন, ন্যাশনাল র‌্যালির নেতা জর্ডান বারদেলা ফ্রান্সের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে মনে করেন তিনি। তখন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমবে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মেরিন বলেন, তাঁর (মাখোঁর) সঙ্গে বিবাদে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই জর্ডানের। তবে তিনি একটি চূড়ান্ত সীমা ঠিক করে দেবেন, প্রেসিডেন্ট সেনা পাঠাতে সক্ষম হবেন না।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাখোঁর কাছে পরাজিত হওয়া মেরিন আরও বলেন, পার্লামেন্ট নির্বাচনে ন্যাশনাল র‌্যালি যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে দলের ২৮ বছর বয়সী জর্ডানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া ছাড়া মাখোঁর সামনে তেমন কোনো পথ খোলা থাকবে না।

এক্সে এক পোস্টে লে পেন বলেছেন, ‘যদি ক্ষমতায় আসি, ফ্রান্সের জনগণকে দেখাতে পারব আমরা প্রতিশ্রুতি রেখেছি।’

এর মানে হলো ক্ষমতা ভাগাভাগি; প্রেসিডেন্ট ও সরকারের আলাদা দল। ফ্রান্সে ২০০২ সালের পর এমনটি দেখা যায়নি। এদিকে ফ্রান্সের নির্বাচন ঘিরে মাখোঁ ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে অতি ডান ও অতি বামপন্থী জোটের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, তাদের ‘চরম’ কর্মসূচিগুলো দেশকে ‘গৃহযুদ্ধের দিকে’ নিয়ে যেতে পারে।

তবে মাখোঁ জোর দিয়ে বলেছেন, যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, ২০২৭ সাল পর্যন্ত তাঁর মেয়াদ থাকা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে তিনি থাকবেন।