স্তন ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার পর রোগীর শরীরে রোগটি আবারও ফিরে আসবে কি না, তা কয়েক বছর আগেই জানা সম্ভব, বলছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা। এ জন্য তাঁরা রক্তের নতুন একটি পরীক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন।
গবেষকেরা বলছেন, ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ রক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রচলিত পরীক্ষার অনেক আগেই এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া সম্ভব।
এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে রোগীর শরীরে স্তন ক্যানসার পুরোদমে ফিরে আসার আগেই টিউমারের ডিএনএর চিহ্ন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। এ পরীক্ষায় সেরে ওঠা রোগীর শরীরে ক্যানসার আবারও ফিরে আসা নিয়ে দেওয়া পূর্বাভাস শতভাগ সঠিক বলে প্রমাণ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পরীক্ষাটির মধ্য দিয়ে এসব রোগীর উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই চিকিৎসা শুরু করা যাবে এবং আক্রান্তদের বেঁচে থাকার হার বাড়বে।
লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের (আইসিআর) গবেষক দল ৭৮ জন স্তন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ওপর পরীক্ষাটি চালিয়েছেন। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন এবং তাঁদের রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল।
রোগীদের ক্যানসার কোষ থেকে নিঃসৃত রক্ত পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ১১ জন নারীর মধ্যে টিউমার ডিএনএ পাওয়া যায়। তাঁদের প্রত্যেকের শরীরেই পরে ক্যানসার নতুন করে ফিরে আসতে দেখা গেছে। অন্য নারীদের ক্ষেত্রে ক্যানসার ফিরে আসেনি।
নতুন পদ্ধতির ওই রক্ত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গড়ে ১৫ মাস আগেই ক্যানসার ফিরে আসার আভাস দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা রোগীর নতুন করে উপসর্গ শুরু হওয়ার বা অসুস্থ হওয়ার ১৫ মাস আগেই ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪১ মাস আগেই এক ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। রোববার শিকাগোতে সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি শীর্ষক এক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
আইসিআরের প্রধান গবেষক গার্সিয়া মুরিলাস বলেন, ‘অস্ত্রোপচার এবং অন্যান্য চিকিৎসার পরও স্তন ক্যানসার কোষ শরীরে থেকে যেতে পারে। তবে এ ধরনের কোষের সংখ্যা এতটাই কম থাকে যে সুস্থ হওয়ার পর নিয়মিত পরীক্ষায় (ফলোআপ আপ স্ক্যান) সেগুলো শনাক্ত হয় না। ওই কোষগুলো অনেক বছর পর রোগীর শরীরকে নতুন করে আক্রান্ত করতে পারে।’
গবেষণাটির অংশ হিসেবে গবেষকেরা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর প্রথমবার রোগ শনাক্ত হওয়ার পরপরই রক্ত পরীক্ষা করেন। রোগীর শরীরে অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপির পর আবারও রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
এই গবেষণায় আংশিকভাবে তহবিল জোগাচ্ছে যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা ব্রেস্ট ক্যানসার নাউ। সংস্থার গবেষণাবিষয়ক পরিচালক সাইমন ভিনসেন্ট বলেন, ‘আগাম শনাক্ত হওয়ার এ বিষয়টি স্তন ক্যানসারের বিরুদ্ধে আমাদের একটি বড় অস্ত্র। আর গবেষণায় প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন পরীক্ষাগুলোর মধ্য দিয়ে স্তন ক্যানসার নতুন করে দেখা দেওয়ার এক বছরের বেশি সময় আগে আভাস দেওয়া যাবে।’
গবেষণাটি এখনো প্রাথমিক পর্বে থাকার কথা স্বীকার করলেও তিনি মনে করেন, আগে আগে ক্যানসার ফিরে আসার আভাস পাওয়া গেলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরুর মধ্য দিয়ে ক্যানসার ধ্বংস করা সম্ভব হবে। ক্যানসার তখন আর শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারবে না এবং তা দুরারোগ্য হয়ে উঠবে না।
যুক্তরাজ্যের এই গবেষণাকে ‘অত্যন্ত চমকপ্রদ’ বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আগামী বছর প্রতি তিন মাস অন্তর এবং পরের পাঁচ বছর প্রতি ছয় মাস অন্তর ক্যানসার আক্রান্তদের ওপর পরীক্ষা চালানো হবে।
তবে কবে থেকে নতুন এই পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যাপক প্রচলন শুরু হবে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্তন ক্যানসার–সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং সচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান ব্রেস্ট ক্যানসার ইউকের হিসাব অনুসারে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে ২২ কোটি ৬০ লাখ নারীর স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। একই বছর মারা যান ৬ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ।