সরকার পতনের পর বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির খবর তৃতীয় দিনের মতো আজ বুধবারও গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি এসেছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগমুহূর্তেও কীভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন, তার বিবরণ এসেছে। কেন তাঁর এমন পরিণতি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, সেই কারণও খোঁজার চেষ্টা করেছে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম।
‘ইতিহাসের বদলার মুখে বাংলাদেশের হাসিনা’ শিরোনামে আজ ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা যেভাবে স্বৈরশাসক হয়ে উঠেছিলেন, তাতে তাঁর এমন পতন ছিল অনিবার্য। স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিরোধীদের দমন, সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কণ্ঠরোধ এবং বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষুব্ধ জনতার গণভবনমুখী মিছিলের ঠিক আগমুহূর্তে পরিবারের সদস্যদের আহ্বানে দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা। তাতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের নির্বিচার হত্যা নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ শুরু করলেও শেখ হাসিনা জোরপূর্বক ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সামরিক নেতৃত্বে তাকে বোঝায়, এটা করলে রক্তপাত আরও বাড়বে। কিন্তু তিনি তা মানতে চাচ্ছিলেন না।
দ্য ডন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেও বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগে অস্বীকৃতি জানায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। আর এর মধ্য দিয়েই শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়। সংবাদমাধ্যমটি বিভিন্ন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানায়, বিক্ষোভ দমনে গুলি না চালানোর সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দিন আগেই নিয়েছিল সেনাবাহিনী। এরপর সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার বিষয়ে পরামর্শ দেন ও পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করেন। এতেও শেখ হাসিনা রাজি না হয়ে বলপ্রয়োগেই জোর দেন। শেষে পরিবারের সদস্যদের আহ্বানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হাসিনা।
‘ঘৃণিত একজন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিদায়ের শেষ কয়েক ঘণ্টা’ শিরোনামে গতকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি।
তরুণ প্রজন্ম কীভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করল, সেই ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা। তাতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কীভাবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দমনের সর্বাত্মক চেষ্টা শেখ হাসিনার সরকার করেছে, তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের চাওয়া অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার গঠনের ঘোষণা এসেছে। বৃহস্পতিবার (আজ) দেশে ফিরবেন তিনি।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে সূত্রের বরাতে বলা হয়, পদত্যাগের পর পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিনল্যান্ড সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। তাতে আরও বলা হয়, এর আগে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবেন ইউনূস: সেনাপ্রধান’ শিরোনামে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার দেশে ফিরলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাল ধরবেন। সংবাদমাধ্যমটির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের এক দিন আগে ড. ইউনূসের সাজা বাতিল করেছেন আদালত।
‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন নেতা কে এই মুহাম্মদ ইউনূস’ শিরোনামে আজ গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের একজন সমালোচক ও ‘গরিবদের ব্যাংকার’ হিসেবে পরিচিত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশটিতে নতুন একটি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
‘বৃহস্পতিবারই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, রাতে শপথ নেবেন ইউনূস, জানালেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান’ শিরোনামে আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর দুই দিন পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে সরকার গঠন করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান।