হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে রোগীর শরীরে যেসব ক্ষতি হয়, তার পেছনে নতুন একটি কারণ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁপানিতে (অ্যাজমা) আক্রান্ত হওয়ার সময় রোগীর শ্বাসনালিতে আস্তরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
সায়েন্স সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিংস কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী দলটি এসব কথা বলেছে। তারা বলছে, এ ধরনের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসা না করে বরং ক্ষতি হওয়ার আগেই রোগীকে প্রতিরোধমূলক ওষুধ দিতে হবে।
বিশেষ করে ধুলাবালু, পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে এলে কিংবা ব্যায়াম করলে শ্বাসনালি আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শ্বাসনালিতে প্রদাহ তৈরি হয়। এতে হাঁপানি রোগীর কাশি হয়, শ্বাসকষ্ট হয় এবং শ্বাস গ্রহণের সময় শব্দ হয়।
প্রচলিত ওষুধ ও ইনহেলার ব্যবহার করে এ প্রদাহ কমানো যায় এবং এগুলো শ্বাসনালিকে প্রসারিত রাখতে পারে। তবে বারবারই হাঁপানিতে আক্রান্ত হলে স্থায়ীভাবে রোগীর শ্বাসনালিতে ক্ষত তৈরি এবং শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে যেতে পারে।
প্রতিবার হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সময় রোগীর শ্বাসনালির চারপাশের কোমল মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হতে থাকে, যা ব্রঙ্কোকনস্ট্রিকশন নামে পরিচিত।
বিস্তারিতভাবে এ প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করার জন্য কিংস কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী দলটি ইঁদুর ও মানুষের ফুসফুসের টিস্যুর নমুনা ব্যবহার করেছে।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক জোডি রোজেনব্লাট বিবিসি নিউজকে বলেন, ব্রঙ্কোকনস্ট্রিকশনের কারণে শ্বাসনালির আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দীর্ঘ মেয়াদে প্রদাহ, নিরাময়যোগ্য ক্ষত এবং সংক্রমণ দেখা দেয়। আর তাতে বারবার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
জোডি রোজেনব্লাট মনে করেন, এত দিন শ্বাসনালির আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
‘এই এপিথেলিয়াল আস্তরণটি সংক্রমণের মতো জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের প্রথম সুরক্ষাব্যবস্থা। আর হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনবরত এ ক্ষত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এটি একটি দুষ্টচক্র। আমরা যদি এ ক্ষতি এড়াতে পারি, তবে আশা করছি আক্রান্ত হওয়াটা একেবারেই প্রতিরোধ করতে পারব।’
গবেষক দলটি একটি সম্ভাব্য প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার কথা বলেছে। তারা এর জন্য গ্যাডোলিনিয়াম নামের একটি উপাদান আবিষ্কার করেছেন। অন্তত ইঁদুরের ওপর উপাদানটি প্রয়োগ করে কার্যকারিতা পেয়েছেন তাঁরা। তবে মানুষের ওপর এর পরীক্ষা চালানোটা নিরাপদ ও যথেষ্ট কার্যকরী হবে কি না, তার জন্য আরও কাজ করতে হবে। আর তা করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা অ্যাজমা অ্যান্ড লাং ইউকের পরিচালক সামান্থা ওয়াকার বলেন, গবেষকদের এ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন দুয়ার খুলল, যা হাঁপানি রোগীদের জন্য খুব প্রয়োজন।