সিডনির বিচিত্র ফ্যাশন শো

ফ্যাশন শোতে বিচিত্র সাজে একজন মডেল
ছবি: ‘অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাশন সপ্তাহ’ আয়োজক কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে

পোশাক হয় সুতার। কিন্তু কেবল সুতাটাই কি হতে পারে পোশাক! আর পোশাক মানেই কি শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা, সালোয়ার-শাড়ি, গেঞ্জি-ফতুয়া! পোশাকের ঢং আর রং, আকার ও প্রকার যে কত হতে পারে, তার দেখা মিলবে অস্ট্রেলিয়ার প্রাণকেন্দ্র সিডনিতে।

শুধু তা-ই নয়, পাটের বস্তা, প্লাস্টিক, পুতুল, কাগজের বাক্স, পত্রিকাসহ আরও কত কিছু দিয়ে যে পোশাক বানানো যায়, এর উদাহরণও পাওয়া যাবে সিডনির এই বিচিত্র ফ্যাশন শোতে। সিডনির ক্যারেজওয়ার্কসে ১৫ থেকে ১৯ মে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশটির বস্ত্রশিল্পকে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাশন সপ্তাহ’। এটি ফ্যাশন শোর দুনিয়ায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ আয়োজনের অন্যতম। এ ফ্যাশন শোর একটি অংশেই ছিল বিচিত্র সব নকশা ও বস্তু দিয়ে তৈরি পোশাকের প্রদর্শনী।

বিচিত্র পোশাকের অংশে কেবল একজন মডেল ভিন্নধর্মী পোশাক পরে হেঁটে দেখান, এমন নয়; তাঁর পরা পোশাকের আবহে সাজানো হয় গোটা মঞ্চ। যেমন একদল মডেল মঞ্চে এলেন ফেলে দেওয়া কাপড়ের অংশ কেটে কেটে বানানো একটি পোশাক পরে, আর বিশাল মঞ্চেও তখন স্তূপ করে রাখা ছিল পরিত্যক্ত কাপড়। অস্ট্রেলিয়ার এই ফ্যাশন শোতেই একবার মূল মডেল হিসেবে মঞ্চে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল শতাধিক ইঁদুর। আর ইঁদুরের সঙ্গে মিল রেখেই বিভিন্ন পোশাক পরেন মডেলরা।

ভিন্নধর্মী পোশাকে ফ্যাশন শোতে অংশ নেন তিনি

ফেলে দেওয়া কাপড়ের টুকরা দিয়ে বানানো কাপড়ের প্রদর্শনী করেন ডিজাইনার জর্ডান গোগোস। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, এমন বিচিত্র নকশার কারণ কী? উত্তরে তিনি বলেন, ‘ফেলে দেওয়া কাপড়ের মধ্যেও যে সৌন্দর্য রয়ে যায়, আমি তা দেখাতে চেয়েছি।’

অস্ট্রেলিয়ার এই ফ্যাশন শোর সব প্রদর্শনী নিয়ে দেশটির এক প্রসিদ্ধ সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হর্নারি বলেন, ‘আমি কয়েক দশক ধরে অস্ট্রেলিয়ান ফ্যাশন উইকের ওপর লেখালেখি করে আসছি। প্রতিবছরই ভাবি এর চেয়ে ভিন্ন আর কী হতে পারে। কিন্তু প্রতিবছরই আমি ভুল প্রমাণিত হই।’

বিচিত্র পোশাকে বিশেষ ভঙ্গিমা

ফ্যাশন শো দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন সিডনিতে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশিও। তাঁদের একজন বলেন, ‘আসলে এ ধরনের ফ্যাশন শোতে মানুষ ক্রয় করবে এমন পোশাকের চেয়ে একজন শিল্পীর সৃষ্টিকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তারপরও কিছু পোশাক দেখলে আপনার হাসি পেতে বাধ্য।’

ফ্যাশন শোতে নানা সাজে একসঙ্গে তাঁরা

অস্ট্রেলিয়ার ফ্যাশন সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হয় সিডনির প্রাণকেন্দ্র ক্যারেজওয়ার্কসকে। ভেন্যুটি কেবল ফ্যাশনের জন্যই সুপরিচিত নয়, দেশটির শিল্প-সংস্কৃতির আদি স্থান ধরা হয় এই সাংস্কৃতিক এলাকাকে। দেশটির সংস্কৃতির বেশির ভাগ মহোৎসবগুলোর প্রাণকেন্দ্রই এই ক্যারেজওয়ার্কস। এখানে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিডনি উৎসব, সিডনি সমসাময়িক শিল্প মেলা, সিডনি লেখক উৎসব, আলোর উৎসব ভিভিড সিডনিসহ অনেক কিছু।

ফ্যাশন শোতে একসঙ্গে তিন মডেল

ক্যারেজওয়ার্কস স্থাপিত হয়েছিল ১৮৮০-৮৯ সালে। ২০০৭ সালের দিকে ক্যারেজওয়ার্কস সাংস্কৃতিক এলাকা হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়।

১৯৯৬ সালে প্রথম হয় অস্ট্রেলিয়ার এই ফ্যাশন সপ্তাহ। শুরুর পর থেকেই আন্তর্জাতিক ফ্যাশন অঙ্গনে জনপ্রিয়তা পেয়েছে আয়োজনটি। নিজেদের নকশা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বের নামীদামি ডিজাইনাররা অংশ নেন এ অনুষ্ঠানে। পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এবারের ফ্যাশন শোতে প্রায় ৪৫ জন ডিজাইনার অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের প্রদর্শনীর ব্যাপ্তি ছিল এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময়।

অস্ট্রেলিয়ার বস্ত্র খাত দেশটির অর্থনীতিতে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের জোগান দেয়। এমনকি প্রায় ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক বিদেশে রপ্তানিও করে অস্ট্রেলিয়া।