জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সারাবিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার দাবি উঠেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সারাবিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার দাবি উঠেছে।

কপ-২৮

চূড়ান্ত চুক্তিতে ঘাটতি দেখছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার বিষয়ে ঐকমত্য হওয়াটা একটি ইতিহাস। জাতিসংঘের কনফারেন্স অব পার্টিজ (কপ–২৮) সম্মেলনের ২৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এ নিয়ে একমত হলো সদস্যদেশগুলো। এ অর্জনকে বিশ্বনেতাদের অনেকে অভিহিত করেছেন ‘মাইলফলক’ হিসেবে। তবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন অনেক জলবায়ু বিজ্ঞানী।  

এবারের কপ সম্মেলন শুরু হয় গত ৩০ নভেম্বর। শেষ দিন গত মঙ্গলবার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে সায় দেয় প্রায় ২০০ দেশ। যদিও সৌদি আরবসহ শীর্ষ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো এ ধরনের চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিল। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মূলত জীবাশ্ম জ্বালানিকে দায়ী করা হয়ে থাকে।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ নিয়ে চুক্তিতে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার জলবায়ুবিশেষজ্ঞ মাইকেল মান। যেমন চুক্তিতে সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই, কত সংখ্যক দেশকে কোন সময়ের মধ্যে এই জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।

মাইকেল মানের ভাষায়, ‘চুক্তিটি এমন, যেন আপনি আপনার চিকিৎসককে কথা দিচ্ছেন—ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর আপনি ডোনাট (খাবার) খাওয়া ছেড়ে দেবেন। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমাতে চুক্তিতে যে ঘাটতি রয়েছে, তা বিপর্যয়কর।’

কপের নিয়মনীতিতে সংস্কার আনার আহ্বান জানিয়েছেন মাইকেল মান। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবের মতো তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর বাধার মুখে জলবায়ু রক্ষায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের। এ ছাড়া ভবিষ্যতে কপ সম্মেলনগুলোয় তেল ব্যবসায়ে জড়িত ব্যক্তিরা যেন সভাপতিত্ব না করতে পারেন, সে বিষয়টিও দেখতে হবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এবারের জলবায়ু সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুলতান আল–জাবের। তিনি দেশটির জাতীয় তেল কোম্পানির প্রধান। এ কারণে এবারের সম্মেলনে তাঁর ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন অনেক পরিবেশবাদী।

ইউনির্ভাসিটি অব ম্যানচেস্টারের জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তনের অধ্যাপক কেভিন অ্যান্ডারসনও চূড়ান্ত চুক্তিতে ঘাটতি দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘চুক্তিতে এমন কিছু বলা হয়নি, তারপরও যদি ২০২৪ সাল থেকে কার্বন নিঃসরণ কমা শুরু করে, সে ক্ষেত্রেও আমাদের ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। চুক্তিতে ২০৫০ সাল নাগাদ এই জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের যে প্রতারণাপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে কান দিলে চলবে না।’