হরদীপ হত্যা ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্কে কি ফাটল ধরেছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
ফাইল ছবি: রয়টার্স

শিখ নেতার হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারত–কানাডা সম্পর্ক এখন তলানিতে। দুই দেশের উত্তেজনা ঘিরে কানাডার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও চিড় ধরেছে—এমন খবর ছড়িয়েছে। তবে এ খবর মানতে নারাজ হোয়াইট হাউস।

কানাডার সংবাদমাধ্যম টরন্টো স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, হরদীপ হত্যায় ভারতের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে গত সোমবার উদ্বেগ প্রকাশ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জ্যাক সুলিভান। কানাডা–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক কথাও বলেছেন তিনি।

শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর

জ্যাক সুলিভান বলেন, হরদীপ হত্যার তদন্তে কানাডা যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতি সমর্থন জানায়। দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সম্পর্কে ফাটলের বিষয়টি আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। কানাডা যে অভিযোগ তুলেছে তা নিয়ে আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই তদন্ত যে অগ্রগতি পাচ্ছে এবং হামলাকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে, তা আমরা দেখতে চাই।’

গত জুনে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে একটি শিখ মন্দিরের বাইরে হরদীপ সিংকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি ভারতের শিখদের জন্য ‘খালিস্তান’ নামের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে চলা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। এ জন্য হরদীপকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দিয়েছিল ভারত। তবে তাঁর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। তাদের দাবি, এ অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

জ্যাক সুলিভানের মন্তব্য নিয়ে শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জ্যঁ–পিয়েরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কানাডা ও ভারত—দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা গভীর যোগাযোগ রাখছেন কি না, তা নিয়েও বিস্তারিত জানানি তিনি। জ্যঁ–পিয়েরে বলেন, ‘তিনি (সুলিভান) গোপন কূটনৈতিক আলাপচারিতা নিয়ে মন্তব্য করেননি। আমিও করব না। তবে হ্যাঁ, ভারত সরকারের আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’

এদিকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠক করেছিলেন ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় চার গণতন্ত্রের কৌশলগত জোট ‘কোয়াডের’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এই জোটের সদস্যদেশ যু্ক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। কোয়াডের বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে ‘সন্ত্রাসীদের’ সীমান্ত পার হয়ে অন্য দেশে প্রবেশ ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। একজনের সঙ্গে কোনো দেশে বিদেশি ‘সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয়দানের বিরুদ্ধেও কথা বলা হয়।

এই অভিযোগই কানাডার বিরুদ্ধে তুলেছে ভারত। খালিস্তানের দাবিতে আন্দোলনের সমর্থক ‘চরমপন্থীদের’ বহুদিন ধরে কানাডা আশ্রয় দিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেছে নয়াদিল্লি। এই সঙ্গে অটোয়ার এই ‘চরমপন্থীদের’ দমনে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

২০০৭ সালে প্রথম কোয়াড জোট গঠন করা হয়। পরে ২০১৭ সালে জোটটি নতুনভাবে তৎপরতা শুরু করে। এর লক্ষ্য ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ সারা বিশ্বে চীনকে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিকভাবে টেক্কা দেওয়া। কানাডাকে এই জোট থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এইউকেইউএস নামের আরেকটি জোট থেকেও কানাডাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে গড়ে ওঠা ওই জোটে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া।

অপরদিকে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক কাঠামো নামের একটি জোটে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ওয়াশিংটন। এই জোটে প্রথমে কানাডাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পরে ২০২২ সালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম ল্যানি জলি আগ্রহ প্রকাশ করায় জোটে নেওয়া হয় কানাডাকে।