চার্চিল থেকে ট্রাস, ১৬ জন প্রধানমন্ত্রী পেলেন ব্রিটিশ রানি

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
ফাইল ছবি: এএফপি

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সিংহাসনে থাকা ব্যক্তিদের একজন। রানি রাষ্ট্রপ্রধান হলেও যুক্তরাজ্যের সরকারব্যবস্থার প্রধান প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর ৭০ বছরের শাসনামলে যুক্তরাজ্যে একে একে ১৬ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন।

বিপর্যস্ত অর্থনীতি, করোনার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে পার্টি আয়োজন করাসহ নানা সমালোচনা মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বিদায় নিচ্ছেন। গত জুলাইয়ে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কয়েক দফা ভোটাভুটির পর আজ সোমবার পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তিনিই হচ্ছেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

এখন দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বরিস জনসন। এর পরই বরিস জনসনের উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী পদে ট্রাসের নিয়োগ অনুমোদন করবেন রানি। লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার ও থেরেসা মের পর ট্রাস হতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনামলে তিনি যে ১৬ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১১ জন কনজারভেটিভ পার্টির, বাকি পাঁচজন লেবার পার্টির। ১৯৫২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন সিংহাসনে বসেন, তখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা উইনস্টন চার্চিল। তিনি ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত সরকারপ্রধান ছিলেন। এরপর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন একই দলের অ্যান্থনি ইডেন। তিনি সরকারপ্রধান থাকেন ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হ্যারল্ড ম্যাকমিলান। ১৯৬৩–৬৪ সালে এ পদে আসেন অ্যালেক ডগলাস–হোম। দুজনই কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ছিলেন। এরপর ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন লেবার নেতা হ্যারল্ড উইলসন। ১৯৭০ সালে উইলসনের স্থলাভিষিক্ত হন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এডওয়ার্ড হিথ। তিনি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

হিথের পর ১৯৭৪ সালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে আবারও আসেন লেবার নেতা হ্যারল্ড উইলসন। দুই বছর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন একই দলের জেমস ক্যালাঘান। তিনি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সরকারপ্রধান ছিলেন। একই বছর যুক্তরাজ্যের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পান মার্গারেট থ্যাচার। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা থ্যাচারের ১১ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষে ১৯৯০ সালে এ পদে বসেন জন মেজর। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা মেজর ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সরকারপ্রধান ছিলেন।

মার্গারেট থ্যাচার ও থেরেসা মের পর লিজ ট্রাস হতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী

১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন টনি ব্লেয়ার। লেবার পার্টির নেতা ব্লেয়ার ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছিলেন। ব্লেয়ারের স্থলাভিষিক্ত হন গর্ডন ব্রাউন। লেবার পার্টির এই নেতা ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সরকারপ্রধান ছিলেন। এরপর কনজারভেটিভ পার্টির ডেভিড ক্যামেরন ক্ষমতায় ছিলেন ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত।

ক্যামেরনের উত্তরসূরি থেরেসা মে। ২০১৬ সালে কনজারভেটিভ পার্টির এ নেতা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। ২০১৯ সালে মে বিদায় নিলে প্রধানমন্ত্রী হন একই দলের বরিস। দুই বছরের কিছু বেশি সময় পর এখন বরিসের বিদায়ঘণ্টা বেজেছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ট্রাস। আর এর মধ্য দিয়ে ৯৬ বছর বয়স্ক রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর শাসনামলে একে একে যুক্তরাজ্যের ১৬ জন প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেলেন।