যুদ্ধে ড্রোন হামলার উত্তাপ

জলে-স্থলে ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান ড্রোন হামলার মুখে পড়েছে রাশিয়া। আরও হামলার হুমকি।

ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় বিধ্বস্ত রুশ সরকারি দপ্তর। গতকাল রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর বাণিজ্যিক এলাকায়

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ড্রোন হামলা। জলে-স্থলে ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান ড্রোন হামলার মুখে পড়েছে রাশিয়া। তিন দিনের মধ্যে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় দ্বিতীয়বারের মতো ড্রোন হামলা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এবারের হামলাটি হয়েছে মস্কোর বাণিজ্যিক এলাকায়। আক্রান্ত ভবনটিতে রুশ সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয় অবস্থিত।

ড্রোন হামলাকে ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী হামলা’ অভিহিত করেছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা বলেন, আরও ড্রোন হামলা এবং ‘আরও যুদ্ধ’ দেখার জন্য মস্কোর প্রস্তুত থাকা উচিত।

গতকাল ড্রোন হামলা হওয়া ভবনটি ‘আইকিউ কোয়ার্টার’ হিসেবে পরিচিত। এই ভবনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে। রয়টার্সের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ড্রোন হামলায় ভবনটির উপরিভাগের কাচ ধ্বংস হয়ে গেছে।

বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা দারিয়া লেভচেঙ্কো বলেন, ‘এই মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ভবনের অবকাঠামো লোকজনের জন্য কতটুকু নিরাপদ, সেটা মূল্যায়ন করে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কাজে সময় লাগবে।’ কর্মীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

গত মে মাসের শুরু থেকে মস্কোয় একের পর এক ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটছে। ওই সময় ক্রেমলিন কমপ্লেক্সের একটি ভবনের ছাদের ওপর দুটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর রয়েছে।

যদিও এসব ড্রোন হামলায় তেমন হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটছে না, তবু এতে অস্বস্তিতে পড়েছে রাশিয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ এগিয়ে যাচ্ছে বলে ক্রেমলিনের যে দাবি, সেটা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

ড্রোন হামলার ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে আসছে ইউক্রেন। যদিও দেশটি সরাসরি এসব হামলার দায় স্বীকার করছে না। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, মস্কো দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

পোদোলিয়াক বলেন, আরও অজ্ঞাত ড্রোন, আরও পতন, আরও গৃহযুদ্ধ, আরও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত রাশিয়ার।

এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সন্ত্রাসী হামলার প্রচেষ্টা’ ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মস্কো শহরের কেন্দ্রের পশ্চিম দিকে দুটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, আরেকটি ড্রোন হামলাও জ্যামিং সরঞ্জাম দিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে সেটি ‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে’ মস্কোভা-সিটি বাণিজ্যিক এলাকার ভবনে আছড়ে পড়ে।

রুশ হামলায় জ্বলছে আবাসিক ভবন, তা নেভাতে ব্যস্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গতকাল ইউক্রেনের খারকিভে

মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেন, একই ভবনে গত রোববারও একটি ড্রোন আঘাত হেনেছিল। তিনি বলেন, গতকালের হামলায় ২১ তলার সম্মুখভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫০ বর্গমিটারের বেশি কাচের দেয়াল ধ্বংস হয়ে গেছে।

‘সি ড্রোন’ হামলা প্রতিহত

গতকাল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কৃষ্ণসাগরে দেশটির নৌবাহিনী ও বেসামরিক জাহাজ লক্ষ্য করে চালানো ইউক্রেনের ‘সি ড্রোন’ হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, রাতে কৃষ্ণসাগরে নৌবহরের টহল জাহাজ সের্গেই কোতোভ ও ভাসিলি বাইকভে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী তিনটি চালকবিহীন বোট দিয়ে হামলার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছিল।

পরে দিনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বেসামরিক নৌযানে হামলা চালাতে আসা আরও তিনটি ‘সি ড্রোন’ ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ নৌবাহিনীর জাহাজ। মন্ত্রণালয় বলেছে, কৃষ্ণসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বসফরাস প্রণালির দিকে রওনা দেওয়া রাশিয়ার বেসামরিক পরিবহন নৌযানে আধা ডুবো তিনটি চালকবিহীন বোট দিয়ে হামলার চেষ্টা চালায় কিয়েভ সরকার।

খারকিভে ড্রোন হামলা রাশিয়ার

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। গতকাল ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানান, শহরের জনবহুল এলাকায় এসব ড্রোন আঘাত হানে। একটি ড্রোন আঘাত হানলে একটি কলেজের আবাসিক ভবনের দুটি তলা ধ্বংস হয়ে যায়। তবে এটি ব্যবহার করা হতো না।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলের পুলিশপ্রধান ভলোদিমির তিমোশকো বলেন, রাতে দুই দফা হামলা হয়েছে। একটি হামলা হয়েছে কলেজটিতে। অপর হামলাটি হয় শহরের কেন্দ্রস্থলে। তিনি বলেন, এটি ছিল খারকিভের জন্য কঠিন রাত।